কোটা প্রথা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে আইনগত ভিত্তি দিতে সংসদে উত্থাপিত হয়েছে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ বিল। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে জনবল নিয়োগ হবে মেধা ও উম্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। তবে সংবিধানের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সরকার ‘পদ সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৩তম অধিবেশনের আজকের বৈঠকে কন্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক।
এরআগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ২১ অক্টোবর বিলটি উত্থাপিত হয়। বিলটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদে বিলের প্রতিবেদন পেশ করে।
আইনে সরকারি কর্মচারিদের দ্বারা ফৌজদাররি অপরাধ সংঘটনের দায়েও বিনা অনুমতিতে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কোন সরকারি কর্মচারির দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কৃর্তক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কতৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে’।
আইনের ৩২ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের লঘু ও গুরুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। লঘু শাস্তির মধ্যে রয়েছে, তিরষ্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন স্থগিত, বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনতি এবং সরকারি আদেশ অমান্য বা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়। গুরুদন্ডের মধ্যে রয়েছে, নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন স্কেলের অবনতিকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, অপসারণ ও চাকরি হতে বরাখাস্ত। এছাড়া আইনে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে ৩৩ অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলা হয়েছে, ‘দায়ী কর্মচারির নিকট থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, তার বেতন, ভাতা, বা প্রাপ্য অন্য কোন আর্থিক সুবিধা হতে কর্তনপূর্বক আদায় করা যাবে। অনরূপভাবে আদায় করা সম্ভব না হলে, তা পাবলিক ডিমান্ড এ্যাক্ট ১৯১৩-এর অধীন সরকারি পাওনা হিসেবে আদায় যোগ্য হবে’। একইসঙ্গে আইনের ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোন আপীল গৃহীত হবে না মর্মেও বিধান রাখা হয়েছে।
এই আইনে সরকারকে, সরকারি গেজেট আদেশ দ্বারা প্রজাতন্ত্রের যে কোন কর্ম বা কর্ম বিভাগ সৃজন, সংযুক্তকরণ, একীকরণ, বিলুপ্তিকরণসহ অন্য যে কোনভাবে পুর্ণগঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৩৬ অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তির কর্মেও শর্তাবলির তারতম্য ও রদ করার বিধান, ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রেও কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের বিধান এবং ২১ অনুচ্ছেদে সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়োগ ও কর্মেও শর্তাবলির বিভিন্ন বিষয়ে প্রণীত ভিন্ন ভিন্ন আইন, প্রয়োজন অনুযায়ী ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত বিধি ও সরকারি অনুশাসন দ্বারা সরকারি কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। সামগ্রিক বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকরি সংক্রান্ত একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নে প্রয়োজিনীয়তা দীর্ঘদিন থেকে অনুভূত হওয়ায় ‘সরকারি চাকরি আইন' প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার