ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয় দুর্নীতি করে না। বরং কিছু ব্যক্তি দুর্নীতি করেছে। ব্যক্তির স্বার্থে। সরকারের বা মন্ত্রণালয়ের হয়ে কেউ দুর্নীতি করেছেন, যা অতীত হিসেবে আমরা দেখতে চাই। আমি সম্পদের হিসাব নিয়ে নিয়েছি। সময় হলে ধরবো। চুপ আছি মানে এই না যে আমি চুপসে গেছি। বরং আমি কালবৈশাখীর মতো আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি আমরা কঠোর ভাবে অনুসরণ করবো। যে সব কর্মকর্তা কর্মচারির বিরুদ্ধে অসৎ পন্থা অবলম্বনের প্রমান পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৎ, দক্ষ, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভাল কাজের জন্য অবশ্যই পুরস্কৃত করা হবে।
রবিবার রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বিয়াম মিলনায়তনে ‘ভূমি সেবায় অধিকতর গতিশীলতা আনায়নে ই-নামজারির ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের যৌথভাবে আয়োজিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ। সভায় বক্তৃতা রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক ফায়েকুজ্জামান, সাবেক সিনিয়র সচিব মাহফুজুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রচলিত আছে দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার শতকরা ৮৫ ভাগ ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের অংশ হিসেবে আমরা ই-নামজারিতে হাত দিয়েছি। এক সময় মানুষের মধ্যে ভূমির নামজারি নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথা ছিল না। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভূমির গুরুত্ব। সরকারি প্রকল্প কিংবা কারো জমির পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা তৈরি করলে সে জমির মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। এখন সবাই ভূমির সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
ভূমিমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ১০ এপ্রিল থেকে ভূমি সেবা সপ্তাহ এবং ভূমি করমেলা করবো। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য হট লাইন সেন্টার স্থাপন করছি। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা তা চালু করতে করতে সক্ষম হবো। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই বোনদের সমস্যার সমাধানের জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলছি শিগগিরই। তাদেরও ই-সেবা দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, মাঠে যে সব কর্মকর্তা কর্মচারি কাজ করছে তাদের কর্তব্য পালনের ওপর মন্ত্রণালয়ের সুনাম দুর্নাম নির্ভর করছে। মানুষ যখন ভাল সেবা পাবে তখন এমনিতেই সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। তবে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার মতো এখনও পরিবেশ তৈরি হয়নি।
সভায় ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দেশের মামলার ৮৫ ভাগ হয় ভূমি বিরোধ নিয়ে। ই-নামজারির সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলে মামলা মোকদ্দমা কমে যাবে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়িত হবে।
সভায় বক্তরা ভূমি সেবায় অধিকতর গতিশীলতা আনতে ভূমি রেকর্ড, জরিপ ও ই-নামজারির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভূমি মন্ত্রণালয়, রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তর, সাব রেজিস্ট্রার অফিস ও তহসিল অফিসের লোকবলের অভাব ও অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠতে মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ মার্চ, ২০১৯/মাহবুব