দেশে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভারত থেকে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় মজুদ রেখে ব্যবসয়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। তাই মজুদদারদের শিক্ষা দিতে ভোক্তাদের পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সব ভোক্তা যদি সাতদিন পণ্যটি না কিনে, তাহলে তাদের পেঁয়াজ কিন্তু পচে যাবে। এ সুযোগটা তারা নিতে পরবেন না। আমরা পেঁয়াজের জন্য হাহাকার করছি। এটা তাদের সুযোগ। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেশি পেঁযাজের ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটা নিচ্ছেন। নয়তো কোনো অবস্থাতেই এতো দামে বিক্রি হওয়ার কথা না। একটি সমস্যা আছে, কিছুদিনের মধ্য পেঁয়াজে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। সব খরচ ধরেও দাম কোন অবস্থাতেই ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। দেখবো কোথাও মজুত করে রাখা হয়েছে কি-না। ইতোমধ্যে আমাদের মনিটরিং টিম বেশকিছু বাজারে গিয়ে জরিমানা করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেটুকু করা সম্ভব আমরা সবটা করছি। আশা করছি, দুই একদিনের মধ্যে বা আজ-কালের মধ্যে দাম কমে যাবে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসলে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণের ব্যবস্থা নেবে সরকার। মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। আরও ৪ থেকে ৫০০ টন আজ আসবে। ফলে কাল বা পরশুর মধ্যে দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকায় চলে আসবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ভারত দাম যেটা বাড়িয়েছে, সেটা লজিক্যাল। তবে রপ্তানি যে বন্ধ করে দিয়েছে, এটার প্রভাব পড়তে একটু দেরি হবে। কারণ বাজারে আগেই অনেক পেঁয়াজ প্রবেশ করে আছে। তারপরও রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয় দিয়েছেন। আমাদের চেষ্টা হলো বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ করা। আমরা সেটা চেষ্টা করছি। ভারতেও পেঁয়াজের দাম ১০০ রুপির কাছাকাছি। আজ মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ মেট্রিক টন প্রবেশ করেছে। আশা করা যাচ্ছে আজকের মধ্যে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ আসবে।
মন্ত্রী বলেন, কার কাছে কী পরিমাণ মজুদ আছে, এটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল। বেশিদিন মজুদ রাখতে পারে না। এছাড়া টিসিবি কিন্তু ১৫ টাকা ভর্তুকি দিয়ে বাজারে বিক্রি করে। তারা ৬০ টাকায় কিনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছে। তাই বলা যায়, ব্যবসায়ীরা খুব বেশি যদি লাভ করে তাও ৬০ টাকার ওপড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের হিসেবে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হওয়ার কথা।
টিসিবির ট্রাক সেলে গ্রাহকের তুলনায় পণ্য কম, তা বাড়ানো হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বাড়াতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার এ বিষয়ে জানা ছিল না। এখন জানলাম। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৩ লাখ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন ঘাটতি থাকে। যার বেশির ভাগ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। মোট আমদানির প্রায় ৯০ ভাগ। আমাদের ভাগ্য ভালো যে মিয়ানমার থেকে কম দামে পাচ্ছি। প্রচুর এলসি ওপেন হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসায় খুব পজেটিভ হয়েছে। ভারত থেকে রফতানি বন্ধ হবে চিন্তাও করিনি। এটার ওপর তো কারও হাত নেই। এভাবে বন্ধ করে না দিলে এ ব্যর্থতার প্রশ্ন আসতো না। কিছু সুযোগ ব্যবসায়ীরা নিয়েছেন। তা আমরা দেখছি। তবে পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য আমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর আরও ৭ থেকে ৮ লাখ টন বেশি উৎপাদন করতে হবে। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধানের পথ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত