নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, ভারতগামী জাহাজের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদান, নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১১ দফা দাবি আজ শুক্রবারের মধ্যে আদায় না হলে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছে নৌযোন শ্রমিকরা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা।
এবার আর কোন প্রতিশ্রুতি নয়, দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মবিরতি আহ্বানকারী সংগঠন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চল সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার।
এদিকে সারা দেশে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হলে জনদুর্ভোগ এবং নিত্য পণ্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সাধারন জনগণ। তাই এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ের উপযুক্ত সমাধান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা সব শেষ কর্মবিরতি করেছিলো গত ২৩ জুলাই। ওই সময় শ্রমিকদের ৩ দিনের কর্মবিরতিতে সারা দেশে যাত্রী, পণ্য এবং জ্বালানি পরিবহন স্থবির হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৩০ দিনের সময় নেওয়া হয়। কিন্তু তারপর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও নৌযান শ্রমিকদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি।
নৌযান শ্রমিক সরোয়ার হোসেন বলেন, তিনি একটি জাহাজে কর্মরত। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ তাকে কোন আজ পর্যন্ত নিয়োগপত্র কিংবা পরিচয়পত্র দেয়নি। নেই কোন প্রভিডেন্ট ফান্ড। তাই এই অনিশ্চিত চাকরি আর করতে চাচ্ছেন না তারা।
স্থানীয় রুটের একটি লঞ্চের কেরানী দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, তিনি যে লঞ্চে চাকরি করছেন এই মর্মে কোন কাগজপত্র তার কাছে নেই। আজ আছেন কাল মালিক ঘাড় ধরে নামিয়ে দিলে কিছুই বলার থাকবে না। তাই এখন থেকে চাকরির নিশ্চয়তা চান তারা।
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুরভীর-৮ লঞ্চের ড্রাইভার আবু তালেব খান জানান, নৌ দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় একজন শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহটি বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মালিক দায় শেষ করেন। আজ পর্যন্ত কোন মালিক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এখন থেকে দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার জালাল আহমেদ জানান, ১১টি দাবির সবগুলোই যৌক্তিক। এর কোনটি বাদ দেয়ার মতো নয়।
সাধারন মানুষ বলছে, নৌ শ্রমিকদের কর্মবিরতি মানেই জনদুর্ভোগ এবং নিত্যপণ্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পাওয়া। তারা মানুষকে জিন্মি না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য হলে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
জনগনকে বেকায়দায় ফেলে কেন আন্দোলন জানতে চাইলে বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের প্রধান মাস্টার মো. আলমগীর হোসেন জানান, তারাও জনদুর্ভোগ চান না। কিন্তু তাদেরও বাঁচতে হবে। ১১ দফা তাদের প্রানের দাবি। সরকার এবং মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি গ্রাহ্য করছে না। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরন করলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবুল হাশেম মাস্টার জানান, এর আগে ৩ দফা কর্মবিরতিকালে মালিক এবং সরকার পক্ষ শুধু তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। এমনকি লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা শ্রমিকদের একটি দাবিও পূরণ করেননি। এবার আর কোন প্রতিশ্রুতি নয়, আজ শুক্রবারের মধ্যে ১১ দফা দাবি পূরণ না হলে রাত ১২টার পর থেকে সারা দেশে সকল (যাত্রী, পণ্য ও জ্বালানিবাহী) ধরনের নৌযানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নৌ শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।
১১ দফা দাবিতে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রথম আন্দোলন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। এক বছর পর ২০১৬ সালের আগস্টে শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই সময় সরকার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ওই গেজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি বছর ২৩ জুলাই থেকে টানা ৩দিন কর্মবিরতি করেন তারা। ওই সময় দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ১ মাসের সময় নিলেও আজ পর্যন্ত নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা