বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকদের একজন হলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। নাজমুল হাসান পাপন বিসিবির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশের ক্রিকেটের মঙ্গলের জন্যই বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ককে নির্বাচিত করে আনা হয়। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকে বিসিবিতে আনা হয়েছিল, তা তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিসিবি পরিচালকের পাশাপশি দুর্জয় বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের চেয়ারম্যান এবং খেলোয়াড়দের সংগঠন ক্রিকেটার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সর্বপ্রথম নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। সে সময় অনুষ্ঠিত এক বোর্ড সভায় ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে আকরাম খানকে সরিয়ে টাইগারদের অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক দুর্জয়কে বিসিবির কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
তার সময়ে বাংলাদেশ দল সেরা একটা সময় পার করেছিল। কিন্তু এর মূল কারিগর ছিলেন তখনকার প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। এই লঙ্কান কোচের অধীনেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছিল ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে অধীনে খেলেই।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল ঘোষণার সময় অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন হাথুরু। লঙ্কান কোচ প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেন যে, দল নির্বাচন নিয়ে তার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট পড়ায় হৈচৈ পড়ে যায়।
সেই ঘটনার রেশ ধরেই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক সভায় ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানের পদ থেকে দুর্জয়কে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় বিসিবি। তার জায়গায় সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই বিসিবি এই রকম গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে দুর্জয়কে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এটা ছিল দুর্জয়ের জন্য চরম এক ব্যর্থতা।
বর্তমানে বিসিবির হাই-পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। কিন্তু এইচপি দল কীভাবে সামনে এগোবে তার মূল লক্ষ্যটাই তিনি পরিষ্কার করতে পারেনি। এই বিষয়ে দুর্জয় অনেকটাই উদাসীন। বাংলাদেশ দলের পাইপলাইন মজবুত করার জন্য যে এইচপি দল গঠন করা হয়, সেই দল কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নেই তার।
এইচপি দলের বর্তমানে কোনো কোচ নেই। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ান কোচ সাইমন হেলমটের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তিনি চলে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এইচপি দলের প্রধান কোচ নিয়োগ দিতে পারেননি দুর্জয়। এই বিষয় নিয়ে তার কোনো চিন্তা আছে কিনা সেটা কারও জানা নেই। তাই কিভাবে দল পরিচালিত হবে কিংবা এই করোনার সময়ে ক্রিকেটাররা কিভাবে নিজেদের ফিট রাখবেন তা নিয়েও কোনো ভাবনা নেই দুর্জয়ের।
এ বিষয়ে নাঈমুর রহমান দুর্জয় বলেন, ‘আসলে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা বসবো। অনেকেই তালিকায় আছে তবে ঠিক করা হয়নি।’
সম্প্রতি এইচপি দল দেশের বাইরে কোনো সফরে যেতে পারেনি। ফলে কোনো ম্যাচও খেলতে পারেনি। অথচ চাইলেই দুর্জয় দেশের বাইরে ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করতে পারেন। ২০১৯ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরের পর থেকে এইচপি দল আর কোনো সফরে যেতে পারেনি।
খেলোয়াড়দের সংগঠন ক্রিকেটার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) বর্তমান সভাপতি নাইমুর রহমান দুর্জয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠনের কোনো নির্বাচন হয়নি। কোনো সুনিদিষ্ট নীতিমালাও নেই কোয়াবের। নামে মাত্র সংগঠনটি চলছে। ক্রিকেটারদের স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা দেখাশোনার উদ্দেশ্য থাকলেও সেখানে বর্তমান কোনো ক্রিকেটারকে প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়নি। যার ফলে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে সংগঠনটি।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সেই ১১ দফা দাবির প্রথম দাবিই ছিল এই কোয়াবের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। ক্রিকেটারদের কোনো স্বার্থ রক্ষা করতে পরেনি সংগঠনটি। যার ফলেই কিন্তু ক্রিকেটাররা চরমভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। এটা ছিল দুর্জয়ের জন্য চরম ব্যর্থতা।
পরবর্তী সময়ে কোয়াবের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করে নতুন করে নির্বাচনের আশ্বাস দেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। কিন্তু এতদিন পার হয়ে গেলেও কোয়াবের সভাপতির পদ ছাড়েননি তিনি।
এ বিষয় নিয়ে দুর্জয় বলেন, ‘আমরা ক্রিকেটারদের নিয়ে বসবো। এরপর সবকিছু ঠিক করবো। আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন