হাতের নৈপুণ্য কারুকার্যে বাঁশ দিয়ে সবজির ডালি বানান শফিকুল ইসলাম। পারিবারিক সূত্রে গত ৩০ বছর ধরে এই কাজ করেন তিনি। সেসময় সপ্তাহে ১০-১২টি ডালি বানাতেন। তবে ২০ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় শফিকুলের একটি পা কাটা পড়ে। এরপর থেকে কর্মক্ষমতা কমেছে তার। এখন ফরমায়েশ পেলে ঘরে বসে তিনি ও স্ত্রী মিলে সপ্তাহে ৪-৫ টা বানান। সপ্তাহে আয় করেন মাত্র ৮০০-১০০০ টাকা। এই সীমিত আয়েই এক সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন তারা। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় তাদের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। সহায়তা পেয়ে শফিকুল বলেন, 'আমার জমি জমা কিছু নাই। বাঁশ দিয়া ডালি বানাইয়া টুকটাক আয় করি। এডা দিয়া কোনরকম সংসার চলে। আপনাদের খাবার পেয়ে ১০ দিনের অভাব কমে গেল। আল্লা তাক ভালো রাখুক।'
সহায়তা পেয়ে মারিজান বেগম নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, 'স্বামী ২০ বছর ধরে অসুস্থ। আমিও কাম করতে পারি না। মাইনষের বাড়ি দুধ-ধান্দা (ভিক্ষাবৃত্তি) করে খাই। তোমাদের খাবার পেয়ে খুশি হইছি। আল্লার কাছে দোয়া করি। আমারে আরো দিতে দিক। যে দশের জন্যে কান্দে তার জন্যে আল্লা কান্দে বাবা।'
আজ রবিবার রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় তাদের মতো ৩০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। উপজেলার নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে নওহাটার পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, 'বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের উপজেলার অসহায় পরিবারের মাঝে উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছে। তাই তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। গতবছর করোনার শুরুতে অনেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজের বাড়ির পাশের প্রতিবেশিও এগিয়ে এসেছিলো। কিন্তু এবার সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ এবারো লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। এই মহতি উদ্যোগের জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।'
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কাউসার আলী, উপাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠের পাবনা জেলা প্রতিনিধি আহমেদ উল হক রানা, কালের কণ্ঠের নিজস্ব ফটো সাংবাদিক সালাউদ্দিন, নিউজ টুয়েন্টিফোরের এস এ বাপ্পী, আতিকুল ইসলাম কৌশিক, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সরকার দুলাল মাহবুব।
জেলার মোহনপুর উপজেলায় ৩০০ অতিদরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। এছাড়া সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। উপজেলার মোহনপুর সরকারি কলেজ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা।
ফাতেমা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, 'করোনাতে খুব কষ্ট করে আছি। এহন আবার বাড়ির উপর পানি উঠছে। নৌকা দিয়া বাড়িতে যাইতে হয়। এই সময়ে তোমাদের খাবার পেয়ে উপকার হইছে। আল্লা তোমাদের সুখে শান্তিতে রাখবে।'
সালমা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, 'আমাদের কেউ সাহায্য করে না। অনেক আগে একবার সেমাই চিনি পাইছিলাম। আর পাই নাই। খুব অভাবে আছি। আপনাদের এই চাল, ডাল দিয়া শান্তিতে কাটবে কিছুদিন। বসুন্ধরা গ্রুপ যেন আরো দেয়।'
খাদ্যসামগ্রী বিতরণের চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা দেশব্যাপী দুই লাখের অধিক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে রংপুর বিভাগের সব জেলায় ২৪ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এখন রাজশাহী বিভাগে আরো ২৪ হাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কাজ করছি। এরপর আমরা খুলনা বিভাগের সব জেলায় এই কার্যক্রম সম্প্রসারিত করব।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক আমজাদ হোসেন, মোহনপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেনসহ শিক্ষক বিএম শফিকুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান মন্ডল, মোহনপুর কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি রতন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক মুত্তাকিন আলম সোহেল, প্রভাষক ইসরাফিল হোসেন রনি সরকার, বেলাল হোসেন।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ৩০০ দুস্থ পরিবার পেল বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা। এছাড়া সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
আজ রবিবার উপজেলার মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়
৮ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে পান চাষ করেন ইউসুফ আলী। বাজারে পানের দাম একেবারে কম হওয়ায় লাভ করতে পারছেন না। এখন পরিবার নিয়ে খুব কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। এই সংকটকালীন সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি। ইউসুফ বলেন, 'এমন সাহায্য পেলে খুব ভালো হয়। এহন আমরা অভাবে আছি। এই খাবারে আমার মত পরিবার ১৫ দিন খাইতে পারব। এমন মাঝে মাঝে পাইলে আমাদের দুঃখ থাকবে না।'
গোলাম মোরশেদ নামের এক উপকারভোগী বলেন, 'বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক আমাদের গরিবরে সাহায্য দিছে। তিনি ভালো মানুষ। তার ভালো হোক। আল্লা আরো দেওয়ার তৌফিক দেক।'
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন