রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রাজনৈতিক সভা করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল। একইসঙ্গে সভাটির বিষয়বস্তু ও আলোচনা বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের, বিশেষ করে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাসপাতালের মধ্যে ‘কাশ্মীর ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি’ শীর্ষক এক সভার আয়োজন করেন। সেখানে বিতর্কিত ভূখণ্ড কাশ্মীরের দখল ও রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিতর্কিত বিষয়। এটা নিয়ে এখানে রাজনৈতিক সভা করায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ডা. জাফরুল্লাহ বাংলাদেশে বসে অন্য কোনো দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালে রাজনৈতিক সভা করা সম্পূর্ণ নীতির বাইরে। এই হাসপাতালের জায়গা দিয়েছে সরকার। বঙ্গবন্ধু নিজে এই জমি দিয়েছিলেন হাসপাতাল চালানোর জন্য, সেখানে রাজনৈতিক সভা করার জন্য নয়। হাসপাতালে রাজনৈতিক সভা করে তিনি রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছেন এবং তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছেন। এটা ইথিকসের বাইরে, নীতির বাইরে। যে ভদ্রলোক এত বড় বড় নীতিকথা বলেন, নীতিবিরোধী কাজ তিনি কীভাবে করেন? হাসপাতালে রাজনৈতিক সভা করায় রোগীদের সমস্যা হবে। কিছু রোগী মরেও যেতে পারে। এটা মারাত্মকভাবে নিন্দনীয় একটি ঘটনা। এর সমালোচনার ভাষা আমার নেই।
তিনি আরও বলেন, উনি যেহেতু সুশীল সমাজের একজন নেতা হিসেবে আমাদের দেশে পরিচিত, এ ধরনের নৈতিকতাবিরোধী কাজ উনার করা একেবারেই উচিত না। উনি তো বিভিন্ন মহল থেকে হাসপাতালের জন্য পয়সা নিচ্ছেন। বিদেশ থেকেও নিচ্ছেন। তারা তো রাজনৈতিক সভা করার জন্য পয়সা দিচ্ছে না। উনার যদি এতোই ইচ্ছা হয়, উনি প্রেসক্লাবে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হল ভাড়া করে সভা করতে পারতেন। এই হাসপাতালের জন্য বিদেশি সাহায্য আসছে, বঙ্গবন্ধু জায়গা দিয়েছিলেন। এটা শুধু রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য, রাজনৈতিক সভা করার জন্য না। রাজনৈতিক বক্তৃতা হলে রোগীদের সমস্যা হবে না? এটা চরম নিন্দনীয় ঘটনা। একেবারেই উচিত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেছেন, হাসপাতালের ভেতরে রাজনৈতিক আলোচনা সভা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য। এছাড়া জাফরুল্লাহ ভাইয়ের ওই হাসপাতালে আমার মনে হয় না কোনো অডিটরিয়াম বা সেমিনার কক্ষ আছে সভা করার মতো। সবচেয়ে বড় কথা হাসপাতালে রাজনীতি ঢোকানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি চাইলে বাইরে হল ভাড়া করে করতে পারতেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, হাসপাতাল সেবাদান কেন্দ্র। এটা রাজনীতির মাঠ নয়। নিজের সুবিধামত এজেন্ডা ঠিক করে ব্যানার টাঙ্গিয়ে রাজনীতি করছেন তিনি। তিনি (জাফরুল্লাহ) সুবিধামত সময়ে খোলস পাল্টান। এ অভ্যাস তার বহু পুরানো। তাকে মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দয়ায় তাকে হাসপাতাল করতে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। সেই হাসপাতালে বসে মানুষের সেবা না করে এজেন্ডা বাস্তবায়নের রাজনীতি করা বন্ধ করতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহকে উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ডা. সাহেবকে মনে রাখতে হবে হাসপাতাল মানুষের সেবার জায়গা। রাজনীতি করার ইচ্ছে থাকলে রাজনীতিতে আসুন। চোরাপথে কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন বন্ধ করুন। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ মুক্তিযোদ্ধা এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর তার কী ভূমিকা সেটাও জাতিকে জানতে হবে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (২/৬/১৯৭৮ হতে ৩১/৫/১৯৮০) তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিতে নিষেধ করেছিলেন। জাতির পিতার কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করে বিএনপিরও সুবিধাভোগী তিনি। তিনি এখন মূলত বিএনপির হয়ে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন