২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৪:০৬

‘আমি ফিরে এসেছি, বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পার্টির সবার সঙ্গে বসবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমি ফিরে এসেছি, বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পার্টির সবার সঙ্গে বসবো’

রওশন এরশাদ

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘সর্বপ্রথম, আমার সুস্থতা ও স্বদেশে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই। আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন ঠিক আছি কিন্ত আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে এবং ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি।’

চিকিৎসা শেষে ৫ মাস পর আজ রবিবার দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব কথা বলেন তিনি। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরেন তিনি।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, আজও বলছি- আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আপনারা সবাই জানেন আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সবার নিকট আমি কৃতজ্ঞ।’ 

‘আমি আবারো বলছি, পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং আমি জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি-যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাদের ফিরে আসার জন্য। ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকুল সময়, যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন-তাদের আমাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি, আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসবো। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

‘এসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য এবং পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে; যেমনটি আমরা ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি।  ইনশাআল্লাহ, আমরা সেই ষড়যন্ত্রগুলোকে নস্যাৎ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।’ 

তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেমন নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। মনে রাখবেন রংপুর জাতীয় পার্টি প্রাণ। এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ 

‘বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্টভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে’।

 রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।’ 

‘বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে? তাছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে “হাওয়া ভবনের” দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি। জনগণ উন্নতি ও শান্তি জন্য পরিবর্তন চায়, যা জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি। অবশ্যই তা বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।’

‘শেষ করবার আগে আপনাদের জন্য একটি ঘোষণা দিতে চাই- আর তা হলো রংপুরে আমাদের প্রিয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য পুত্রতুল্য এবং তার পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করছি, তিনি হলেন সাবেক মেয়র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, জনমানুষের প্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। তার নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে, ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দবাদ, জাতীয় পার্টি জিন্দবাদ, পল্লীবন্ধু অমর হোক।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 
 
 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর