‘বিদেশিদের চাপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখ শুকিয়ে গেছে’, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘গতকাল একটা ভাষণে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাকি মুখ শুকিয়ে গেছে। উনার প্রভু পাকিস্তান আর পশ্চিমারা চাপ দেওয়ায় নাকি আমাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। ফখরুল সাহেব আগস্ট মাস বাঙালির শোকের মাস, রক্ত ক্ষরণের মাস। এই মাসে আমরা শোকাতুর থাকি। এটা উৎসবের মাস নয় যে, আপনি আমাদের হাসিমুখ দেখবেন।’
‘আপনারা আওয়ামী লীগের রুদ্র মুর্তি দেখেছেন। এই আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দুইবার আপনাদের ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীদের চেনন না এখনো। আওয়ামী লীগের কর্মীদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আগস্ট মাস যাক তারপর দেখবেন আমাদের নেতাকর্মীদের অবস্থান।’
হানিফ বলেন, ‘কালকে দেখলাম খুব খুশি ছিলেন আর আজকে দেখলাম আপনার (মির্জা ফখরুল) মুখ শুকিয়ে গেছে। পরশুদিন আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের পত্রিকায় খবর এসেছে, বন্ধু রাষ্ট্র থেকে তারা বলেছেন এই বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয় তাহলে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বস্তির মুখে পড়তে পারে। এতেই তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। উনি বলেছেন এটা নাকি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল। কী বাক্য।’
আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বিদেশি প্রভুরা বাংলাদেশে এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না’, উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। বিদেশি প্রভুর কাছে ধরণা দেন কোনো অসুবিধা নেই। বিদেশি প্রভুরা এসে এই দেশের পট পরিবর্তন করতে পারবে না। এই দেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার সাথে আছে কোনো শক্তির ক্ষমতা নেই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) যে প্রভুর দেশে দৌঁড়াচ্ছেন সেই প্রভুর দেশের সংস্থা আইআরআই জরিপ করে বলেছে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল। ৭০ শতাংশ মানুষের আস্থাশীল সরকারের পতন ঘটানোর সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘লজ্জা হয় না মির্জা ফখরুল। কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল তখন খুশিতে বাকবাকুম করে অভিনন্দন জানালেন। এই দেশের রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে সকাল বিকাল আপনারা বিদেশিদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন, দৌড়াচ্ছেন। তাদের দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন সেই বক্তব্য আপনাদের ভালো লাগছে। এসব আপনাদের কাছে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বলে মনে হয়নি। এখন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র তারা অস্বস্তির কথা বলেছে এতেই মনে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। নির্লজ্জ দালালির একটা সীমা আছে ফখরুল।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, রাজাকারের সন্তান রাজাকারই হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা রাজাকার ছিল এখনও এরা পাকিস্তানের রাজাকার। এরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ধ্বংস করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে কী ছিল বাংলাদেশ? বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়েছিল, নরক বানিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল, ১০ হাজার মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা। সেদিন কোথায় ছিল মানবতা, কোথায় ছিল গণতন্ত্র, কোথায় ছিল আইনের শাসন?’
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়াম লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ