সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে এবং ডেটা নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। তিনি একে "ডেটা নৈরাজ্য" বলে উল্লেখ করেন।
ড. ভট্টাচার্য বলেন, শেখ হাসিনার প্রশাসন হয়তো রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপি সম্পর্কিত ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ১৮.৩৬ ট্রিলিয়ন টাকার বৈদেশিক ঋণের বোঝা রেখে গেছে, যা দেশের অন্তত তিন অর্থবছরের বাজেটের সমান।
তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান তিনটি বাধার কথা উল্লেখ করেন—সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি। তিনি মনে করেন, এসব সমস্যার জন্য শেখ হাসিনা প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করলেও তা যথাযথ নয়।
এছাড়া, ড. ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জিডিপিতে করের অবদান বিশ্বের মধ্যে অন্যতম নিম্নহারে রয়েছে, যা ২০২৫ সালের জুন নাগাদ ৮.৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তিনি এই প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, হয় এই প্রবৃদ্ধি বাস্তবিক ছিল না, অথবা যারা এই প্রবৃদ্ধি থেকে উপকৃত হয়েছেন তারা করের আওতায় আসেননি এবং সেই অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেবার তহবিল সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও আইএমএফ থেকে জরুরি তহবিল পাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ বর্তমানে এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য সংগ্রাম করছে, তবে ড. ভট্টাচার্য মনে করেন, দেশে এখনো উন্নয়নের সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতৃত্বের পরিবর্তনের পরও দেশ সঠিক পথে আছে, তবে উন্নয়নের পথে যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল