পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার নাম পরিবর্তন করে পূর্বতন জিয়ানগর নামটি পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ওই উপজেলার তিন হাজার চারজন নাগরিকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনের পক্ষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বরাবরে একটি আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, 'এলাকাটি এক সময় পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার সঙ্গে একীভূত ছিল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রচেষ্টায় নিকার ৮৭তম বৈঠকে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী থানাকে জিয়ানগর উপজেলা নামে নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। এরপর ২০০২ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পিরোজপুর সদর উপজেলার পত্তাশী, পারেরহাট, ও বালিপাড়া এই ৩টি ইউনিয়নের ৯৪.৬০ বর্গ কি. মি. আয়তন এলাকা নিয়ে জিয়ানগর উপজেলা নামে একটি নতুন প্রশাসনিক উপজেলা গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের বলে ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থানীয় জনগনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দুরকানী সফর করে কলেজ মাঠে এক জনসভায় ইন্দুরকানী থানাকে জিয়ানগর উপজেলা নামে উদ্বোধন করেন।
পরবর্তীতে, ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) সভায় পিরোজপুরের ৭ম উপজেলা জিয়ানগরের নাম পরিবর্তন করে পূর্বের ইন্দুরকানী থানার নামে নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ (উপজেলা-১ শাখা) এর জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, এই নাম পরিবর্তনের পেছনে জিয়ানগর নামের সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামের সামঞ্জস্যতা থাকায় কেবল রাজনৈতিক বিদ্বেষ এবং হীনমন্যতা ব্যতীত আর কোনো কারণ ছিল না। বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী এই নাম পরিবর্তনের কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি।
আবেদনে আরও বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত আত্মত্যাগের পথে উঠে আসা গণঅভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
সুতরাং, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া বিভিন্ন অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে রয়েছে, যে লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজও করে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের জন্মস্থান এই উপজেলার শ্রুতিকটু নাম “ইন্দুরকানী” পরিবর্তন করে এর পূর্বতন নাম ‘জিয়ানগর’ প্রতিস্থাপন করা অতীব জরুরি। উপজেলার এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি, এবং গণমানুষের আত্মত্যাগের উপর প্রতিষ্ঠিত এই দেশপ্রেমিক সরকার আমাদের দাবিটি মেনে নিবে বলে আমরা স্থানীয় জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
‘জিয়ানগর’ নামটি পুনর্বহাল করার জন্য গণমানুষের এই আকুল দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আর্জি জানানো হয় আবেদনে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ