বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়ম

জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা চার মাসেও ইসিকে জানায়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাইবান্ধা-৫-এর উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলাকে তা জানাতে বলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে দায়ীদের শনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের চার মাসের মাথায় এ তথ্য সংশ্লিষ্ট অনেক বিভাগ এখনো ইসিকে জানায়নি।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে অনিয়মের কারণে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন বন্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম। তদন্তের পর ১ ডিসেম্বর সিইসি জানান, নির্বাচনে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মে সম্পৃক্ততার কারণে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশের উপপরিদর্শক, নির্বাহী হাকিমসহ শতাধিক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনী এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সুপারিশ অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো কি না, এক মাসের মধ্যে তা কমিশনকে জানাতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে।

এদিকে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা জানাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে ফের চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যে চিঠিগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো ১৩৩টির মতো হবে, ৪০টির মতো জবাব পেয়েছি যে তারা (মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর) অ্যাকশন নিচ্ছে।’ পদ্ধতিগতভাবে দীর্ঘসূত্রতা হলেও ব্যবস্থা নেওয়ার অগ্রগতি জানতে আবার চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ‘আমরা যখন চিঠি লিখি, ডিপার্টমেন্টের কিছু রুলস মেনে চলতে হয়। পদ্ধতিগত, সেসব কারণেই হয়তো ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং প্রসিডিংসটা চলছে। অনেকের কাছ থেকে আমরা জবাব পাইনি। আমরা দ্বিতীয়বার চিঠি দেব। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অথবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের কাছে কি না, এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের জ্ঞাত করব।’ ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে গতকাল নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে গাইবান্ধা থেকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পরিচালক করায় তা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হলো কি না, জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে সিইসি বলেন, ‘যে দায়িত্বে তিনি (রিটার্নিং কর্মকর্তা) ব্যর্থ হয়েছেন, সে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে বা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা প্রমোশন নয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দ্যাট ইজ গুড এনাফ। এটাই হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম, তাকে তার দায়িত্ব থেকে তুলে নিয়ে আসা।’

চার মাস আগে কমিশন জানিয়েছিল, দায়িত্বে অবহেলার জন্য গাইবান্ধা উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি পুলিশের পাঁচজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হবে। ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে, এডিসি ও একজন নির্বাহী হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইসি সুপারিশ করবে বলে জানানো হয়েছিল। আর ১৪৫ কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্টদের আর কখনো ভোটের দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সিইসি।

সর্বশেষ খবর