তিন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতে এখন কিছুটা স্বস্তির হাওয়া। শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশা, এই আনন্দের হাওয়া স্থায়ী হোক; দূর হোক সব অশান্তি-ভোগান্তি, ফিরে আসুক মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। কিন্তু 'মর্নিং শোজ দ্য ডে' বলে যে প্রচলিত প্রবাদটি আছে, সেদিক থেকে বিবেচনা করলে নিশ্চিত করে বলা যাবে না এই স্বস্তি, এই শান্তি স্থায়ী হবে কতদিন। কারও কারও ধারণা ছিল, বিএনপি এই নির্বাচনে আসবে না। বিগত উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত সরকার পক্ষ যেভাবে 'চোখ উল্টে ফেলেছিল' এবং সীমাহীন অনিয়ম করেছিল বলে মিডিয়ায়ও খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে বিএনপি থেকে বলা হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা আর কোনো নির্বাচন করবে না। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়াও সরাসরি কথা বলেছেন। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপের ফলাফলে যে ট্র্যান্ড লক্ষ্য করা গিয়েছিল তা থেকে অনুমান করা গিয়েছিল যে, সেই নির্বাচনে ৪৫০ উপজেলার মধ্যে বিএনপি জোট হয়তো ৩৫০টিতে জিতে যাবে। বিভিন্ন দেশে, এমন কি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নির্বাচন চলাকালে ফলাফল প্রকাশের আগেই ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে যে ফলাফলের ধারণা দেওয়া হয় তা কোথাও খুব একটা ভুল হয় না দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। কখনো কখনো যা ধারণা করা হয় ফলাফল হয়ে যায় তারচেয়েও বেশি। আমাদের উপজেলা নির্বাচনে বুথ ফেরত ভোটারদের মতামত নয়, দুটি ধাপের নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতেই উপজেলা নির্বাচনে শাসক দলের করুণ পরিণতির আভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আভাস পাল্টে দেওয়া হয়েছে বলে বিরোধী দল যে অভিযোগ করেছে আওয়ামী সমর্থক একটি সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ ছাড়া বাদবাকি জনগণও তা বিশ্বাস করে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের নেতিবাচক স্থানটি আরও নেতিবাচক হয়ে যায় সেই নির্বাচনের পর। মূলত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনেই এই কমিশন ক্ষমতাসীন লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল কর্তৃক সমালোচিত হতে থাকে। সন্দেহ ও অবিশ্বাসের স্থানটি তেমনই আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সিটি নির্বাচন না-ও করতে পারে বলে ধারণাটার এটা একটা বড় কারণ ছিল। দ্বিতীয়ত বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের গত তিন মাস ধরে সরকার দাবড়ের ওপর রেখেছে। প্রায় তিন মাস যাবৎ জোটটি সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। দুই মাসের বেশি শুক্র-শনি দুই দিন বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিন হরতালও চলছে। অবরোধ-হরতালের মধ্যে সহিংসতা-নাশকতায় প্রায় ১২০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৭ জন পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে; বাকিরা আইনবহির্ভূত ক্রসফায়ার, সংঘর্ষ ও অন্যান্য কারণে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, অবরোধ-হরতালকারীরা পেট্রলবোমায় নিহতদের 'হত্যার' দায় নিচ্ছে না, অপরদিকে সরকারও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ভিন্নভাবে চিত্রিত করছে। আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার কজনকে হাতেনাতে ধরে স্পটে গুলি করে মারা হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। অভিযোগ করা হয় অন্য জায়গা থেকে ধরে নিয়ে নাশকতার অভিযোগে চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য এখনো চোখে পড়েনি। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অবরোধ-হরতালে যে নৃশংসতা-নাশকতা হয়েছে শান্তিপ্রিয় জনগণ তা সমর্থন করেনি। বিএনপির বহু সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীও এর বিরুদ্ধে। আবার এই সহিংসতা-নাশকতাকে উপলক্ষ করে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্তদের ওপর সরকারি অভিযানকেও সর্বাংশে সমর্থন করছে না মানুষ। হুকুমের আসামি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই যার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা নেই। কারও বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও আছে। তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্ররায়, দলের যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও তৃর্ণমূল পর্যায়ের বহু নেতা, কর্মী এমন কি সমর্থকও জেলে। সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা। রিমান্ড-নির্যাতনের ভয়ে অনেকে আদালতে জামিন নিতেও যাচ্ছেন না। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমতাবস্থায় বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাবে না এমন একটা ধারণা বেশ জোরালোই ছিল। এ ক্ষেত্রে একটি বিজ্ঞ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তারা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে নির্বাচন কমিশন যে বৈরী আচরণ শুরু করেছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি নির্বাচনে থাক নির্বাচন কমিশন কি তা চায় না? সরকারের ভূমিকাই বা কি?
দুই
আমাদের সবার মনে থাকার কথা যে, অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নবম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মহাজোট প্রার্থীরা ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে সমীকরণটা একরকম ছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তার দল বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার কথা ছিল। স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে গণতন্ত্রী (!) তারেক রহমানের বৈঠক ও গোপন শলাপরামর্শ এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে এরশাদের কথোপকথনের পর সর্বত্র ধারণাটা বদ্ধমূল ছিল যে, এরশাদ তার 'ভাবী' ও 'ভ্রাতুষ্পুত্রের' সঙ্গে থেকেই নির্বাচন করবেন। কিন্তু এরশাদ প্রমাণ করেছিলেন, তাকে যে 'আনপ্রেডিকটেবল' বলা হয় তা আসলেই সত্য। এরশাদ তার সিদ্ধান্ত পাল্টালেন। এর আগে সর্বত্র আওয়ামী লীগের সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথা শোনা যাচ্ছিল। কেননা বিএনপি, জামায়াত আর জাতীয় পার্টির জোট- ভোটের হিসাবটা একেবারেই পরিষ্কার। হঠাৎ আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল এবং ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আরও দল যুক্ত করে মহাজোট গঠনের ঘোষণাও এলো। বিএনপির হাওয়া ভবনের লোকজনের ভিতর তখন গুলি খাওয়া হরিণের মতো ছটফটানির দৃশ্য দেখেছেন অনেকে। অর্থাৎ তারা চায়নি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক। আসার আমন্ত্রণটা ছিল কৃত্রিম। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমদরা মহাজোট মঞ্চে গিয়ে উঠলেন নাটকীয়ভাবে। নির্বাচনী নাটকও জমে গেল। মহাজোট প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। অস্থিরতা বেড়ে গেল হাওয়া ভবনে। ফাঁকা মাঠে আর গোল দেওয়া হলো না। তারপর নতুন বিস্ময়। এরশাদের নির্বাচনের যোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করা হলো। মহাজোট থেকে বলা হলো, শরিক দলের নেতার মনোনয়ন বাতিল করা হলে তারা নির্বাচন বর্জন করবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বিএনপি-জামায়াতই দায়ী থাকবে। এরশাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেল এবং প্রতিবাদে মহাজোটের সব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন। বিএনপির কিছু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। হাওয়া ভবনে সে কী মিষ্টি বিতরণের ধুম! কিন্তু সেই নির্বাচন করতে পারেননি হাওয়া ভবনের 'কলের পুতুল' বলে বিরোধী মহাজোট কর্তৃক সমালোচিত অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। সেই অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্তের কারণে ছোট হলো নির্বাচন কমিশন, বিদায় নিতে বাধ্য হলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও। রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে হানাহানি, সহিংসতা। লগি-বৈঠার আঘাতে প্রকাশ্য দিবালোকে জলজ্যান্ত মানুষ হত্যা এবং লাশের ওপর লাফালাফির দৃশ্য দেখল এবং অপরদিকে গুলির প্রকাশ্য নির্দেশ শুনল মানুষ। এরপর সেই সন্ত্রাস-সহিংসতার রথে চড়ে এলো ওয়ান-ইলেভেন। নবম সংসদ নির্বাচনটি যদি সুষ্ঠুভাবে করতে দেওয়া হতো, তাহলে জাতিকে ওয়ান-ইলেভেনের অভিজ্ঞতা নিতে হতো না।
সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তিন সিটিতে সরকার সমর্থিত প্রার্থী হেরে গেলেও লীগ সরকারের পতন হবে না। কিন্তু নানা কারণে এ স্থানীয় সরকার নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ের কাছেই এটা একটা বিরাট ইজ্জতের লড়াই। সরকার পক্ষ থেকে গত আড়াই-তিন মাস ধরে বলা হচ্ছে, ঢাকা মহানগরীর মানুষ খালেদা জিয়া, তার দল ও জোটের সঙ্গে নেই। তারা হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের প্রসঙ্গ তুলে বলে, খালেদা জিয়া ঢাকাবাসীকে সেদিন রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন; কিন্তু কেউ নামেনি। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসিতে অংশ নিতে ঢাকাবাসীকে আবার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী, কেউ সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, সেদিনও ঢাকাবাসী তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতেও ঢাকার মানুষের অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। এসব বলে আসলে সরকার ভুল হিসাব কষেছে। যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়, তেমন পরিস্থিতিতে সরকারি বাধা, মামলা-মোকদ্দমা, দমন-দলনের মধ্যে অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষেও তাদের সমর্থকদের নামতে দেখা যায়নি। মৌলিক নাগরিক অধিকার ভোগে বাধা দেওয়া না হলেই বোঝা যায় মানুষ কী চায়। কোকোর জানাজায় বাধা দেওয়া হয়নি। সেদিন কয়েক লাখ লোকের জানাজায় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, পরিবেশ অনুকূল হলে বিএনপির পক্ষে রাস্তায় নামার লোক ঢাকায় আছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ঢাকা সিটিতে জিততে পারবে না ধারণা থেকেই এতদিন এখানে নির্বাচন হয়নি। এখন সরকার হয়তো মনে করেছে, অবরোধ-হরতালে লিপ্ত বিএনপি এখন আর সিটি নির্বাচনে উৎসাহ দেখাবে না। জেল, মামলা, মোকদ্দমাসহ নানাবিধ ভয়ভীতির কারণে যোগ্য প্রার্থীও পাবে না বিএনপি। তাই ঢাকা সিটিতে কিস্তিমাত করার জন্য সরকারি দলের এটা একটা মোক্ষম সময়। তারা এখন কপাল কুঁচকে ফেলেছে বলে মনে হয়। বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শাসক দলে নবম সংসদ নির্বাচনকালে (যে নির্বাচন বাতিল হয়েছে) হাওয়া ভবনের কুশীলবদের মতোই অস্থিরতা প্রকাশ পাচ্ছে। কিছু কিছু মন্ত্রী-নেতা এমন ইরিটেটিং কথাবার্তা বলছেন যাতে মনে হতে পারে, তারা চাইছেন ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক।
পরিস্থিতি খুব বেশি অসহনীয় করে তুললে বিএনপি যদি মাঝপথেও নির্বাচন বর্জন করে বসে সরকারের জন্য তা সুখদায়ক হবে না। তিন সিটি নির্বাচনে সরকারের আচরণ ও ভূমিকা প্রত্যক্ষ করছে মানুষ। এ নির্বাচনে প্রার্থী না হয়েও লাখ লাখ লোক অংশগ্রহণকারী। যার যার দলের লোক, বন্ধু, আত্মীয়ের পক্ষে তারা এরই মধ্যে নেমে পড়েছে। বাধা দিলে এবার লড়াই বেধে যেতে পারে বিএনপির সঙ্গে নয়, সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রামের ভোটার সাধারণের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি মাথায় রাখলে আখেরে ফল পাবেন।
তিন
ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মূল প্রার্থী ছিলেন তাদের পার্টি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি দেশের একজন লিডিং ব্যবসায়ী। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। কারণ দেখানো হয়েছে, তার প্রার্থিতার প্রস্তাবক ঢাকা উত্তরের ভোটার নন। তবে তিনি ঢাকার ভোটার- যে ঢাকা মেট্রো সিটি আগে একটি করপোরেশন ছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থককে এলাকার ভোটার হওয়ার কথা বলা আছে। নিয়মটির ব্যাপারে কঠোর মনোভাব বোধ হয় পরিবর্তন করা যায়। সংসদীয় কোনো একক অঞ্চলের ভোটার ও বাসিন্দা না হয়ে শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া ও হু. মু. এরশাদ যদি ওই অঞ্চলের এমপি হতে পারেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলাকার বাসিন্দা ও ভোটার প্রার্থী হলে তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা ও ভোটার প্রস্তাব বা সমর্থন করলে খুব একটা অসুবিধা হয় কিনা সংশ্লিষ্টদের তা ভেবে দেখা উচিত। কিন্তু যতক্ষণ নিয়মটা আছে, ততক্ষণ তো নিয়ম মানতে হবে। আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতো একজন বিচক্ষণ ও শিক্ষিত লোক কি তা জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন। তাহলে তিনি কাজটা কেন করলেন? অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা, তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার জন্য তিনি জেনেশুনেই তা করেছেন। মনোনয়নপত্র তিনি দাখিল করেছেন তার বর্তমান নেত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য। তিনি চেয়েছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকা উত্তর সিটিতে নির্বাচন করুক। তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী ছিলেন এবং জেতার মতো প্রার্থী ছিলেন। ঢাকার মেয়র হওয়ার শখও তার অনেক দিনের। তাহলে এ কাজটি তিনি করলেন কেন? চতুর্দিকে তীর্যক সমালোচনা হচ্ছে যে, তিনি সিরিয়াসলি নির্বাচন করলে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হেরে যেতে পারেন। তাতে প্রধানমন্ত্রীর অসন্তুষ্টির উদ্রেক হতে পারে যা তিনি চান না। একসঙ্গে তিনি দুজনকে সন্তুষ্ট করার কৌশলই নিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। প্রকারান্তরে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে ফাঁকিই দিলেন বলে মনে হয়। নিজে নির্বাচন করবেন না এমন একটা পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকেই তিনি তার ছেলের নামেও একটি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সেটি কিন্তু ভুল হয়নি। দলের শক্ত কোনো বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ বা পরামর্শও দেননি। বিষয়টি রহস্যময়ই বটে। কাদের নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি বসতি- ভাবতেই অবাক লাগে। এ রকম একেকটা ঘটনা ঘটে, বেগম জিয়া একেকটা 'আছাড়' খান আর বিএনপি অনুরাগীরা ভাবেন, দলের সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন দলের জন্য কতটা জরুরি!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট,
ই-মেইল : [email protected]