সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নানা কারণে বিএনপি এখন খুবই দুর্বল একটি রাজনৈতিক দল। তবে তার চেয়েও বেশি দুর্বল হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কারণ, ভালো এবং শিক্ষিত লোকেরা এখন আর আওয়ামী লীগ করেন না। অর্ধ-শিক্ষিত, মাস্তান আর ভবঘুরেরাই আওয়ামী লীগ করছে নিজেদের আখের গোছানোর জন্যে। আওয়ামী লীগ এত দুর্বল যে, নির্বাচন দিলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেত্রীও হতে পারবেন না।
বিএনপি নেতা খোকন বলেন, ২০ ভাগ মানুষেরও বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন নেই। এ অবস্থায় পুলিশের সমর্থনে তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সরকারের তাবেদারি করতে গিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত অর্থে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। তারা বিএনপি নেতাদের কীভাবে ফাঁসানো যায়-সে চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যত বেশি মামলা দেয়া সম্ভব হয়, তত দ্রুত পদোন্নতি পাচ্ছেন পুলিশ অফিসারেরা।
খোকন বলেন, বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা নেই। প্রতিবাদের সুযোগ নেই। সরকারের দু:শাসনের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং দূরের কথা, ঘরে বসেও যদি কেউ সমালোচনা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ১/১১ এর মঈন-ফখরুদ্দিনের সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো। দু:খজনক হলেও সত্যি যে, শেখ হাসিনার মামলা কোর্টে ওঠার সাথে সাথে খারিজ হয়ে যায়। আর বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো এখনো চলছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম পচা গম আনলেও তাকে গ্রেফতার বা তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে না। আর বিএনপির লোকেরা দুর্নীতি নিয়ে কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ইয়ং হলে গুম করা হয়। অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, হয়রানি করা হয়। তারেক রহমান লন্ডনে বক্তব্য দেন কিন্তু মামলা করা হয় দেশে। একটু সমালোচনাও তারা সহ্য করতে পারছেন না। তিনি বলেন, এই দেশে চরম সংকট চলছে। দেশ, দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই সংকটে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।
কন্ঠশিল্পী ও জাসাস নেত্রী বেবী নাজনীন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, আমি কেন মানুষের জন্যে গান করি না। গান কি ছেড়ে দিয়েছি? কী জবাব দেব। দেশে তো গাইতে পারি না। এজন্যে প্রবাসে গাইছি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম এ সালাম বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া দেশ এগুতে পারে না। তাই মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে যে কারো নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই। মামলা, হামলা, গুম আর ক্রস ফায়ার আতংকে দেশের মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তাই প্রবাসীদের সোচ্চার হতে হবে বিবেকসম্পন্ন বিশ্বকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করার জন্যে।
২৩ অক্টোবর শুক্রবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল) জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকারও উপস্থিত হবার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। খোকার বিরুদ্ধে ১৩ বছরের কারাদন্ডসহ সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের যে রায় দেয়া হয়েছে তার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা ছিল যে, ছয় খণ্ডে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সকল নেতাই উপস্থিত হবেন। কিন্তু চার খণ্ডের নেতারা এসেছিলেন। অধ্যাপক দেলোয়ার, আনোয়ার হোসেন, মজিব মজুমদার ও পারভেজ সাজ্জাদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ দুটির কেউই আসেননি।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, আলহাজ সোলায়মান ভুইয়া, আকতার হোসেন বাদল, জিল্লুর রহমান, শরাফত হোসেন বাবু, জসীম ভুইয়া, গোলাম ফারুক শাহীন, মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সাঈদুর রহমান সাঈদ, গিয়াসউদ্দিন, ফারুক হোসেন মজুমদার, আবুল বাশার, জাকির এইচ চৌধুরী, জসীমউদ্দিন ভিপি, আবুল কাশেম, আতাউর রহমান আতা, মাজহারুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ অক্টোবর ২০১৫/ এস আহমেদ