মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য এবং চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান লালন-পালনে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারটিও অভিভাবককে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সী সন্তানের ৫৯ শতাংশ অভিভাবকই ঋণগ্রস্ত। এ ছাড়া ৮১ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন যে তারা ঋণ নিয়ে চিন্তিত থাকায় সন্তান ধারণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
‘ন্যাশনাল ডেবট রিলিফ অ্যান্ড টকার রিসার্চ’ নামক একটি সংস্থার গবেষণা-জরিপে ২৬ আগস্ট উদ্বেগজনক এমন তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এ গবেষণায় আরও উদঘাটিত হয়েছে যে, অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহের স্বার্থে অনেক অভিভাবকই পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ে সক্ষম হচ্ছেন না। সারা আমেরিকার ২০০০ অভিভাবক এ জরিপে অংশ নিয়েছেন। প্রতি ১০ জনের ছয়জনই শিশু সন্তানের বোঝা বইতে সক্ষম হচ্ছেন না। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে অনেকে বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এর আগে, ২০২২ সালে পাবলিক পলিসি থিঙ্কট্যাংক ‘দ্য ব্রুকিং ইনস্টিটিউট’র গবেষণায় উদঘাটিত হয় যে, মাঝারি আয়ের পরিবারের দুটি শিশুর বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে অভিভাবককে ব্যয় করতে হচ্ছে ৩১০৬০৫ ডলার করে। ব্যয়ের সাথে আয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় অথবা ক্রমান্বয়ে বৈষম্য বাড়তে থাকায় আমেরিকানরা সন্তান ধারণে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
২০২৪ সালে সিডিসির (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আমেরিকায় প্রতি মহিলা গড়ে ১.৬ জন শিশু ধারণ করছেন-যা মৃত্যুর চেয়ে অনেক কম। আর এভাবেই জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়েছে। এর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানে থমকে দাঁড়িয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শীর্ষ কর্মকর্তা মাইকেল রায়ান উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে গণমাধ্যমে বলেছেন, সন্তান লালন-পালনে আমেরিকান অভিভাবকরা এমন নাজুক অবস্থায় নিপতিত হওয়ার তথ্য হঠাৎ করে সামনে আসেনি। তা দীর্ঘদিন থেকেই বিরাজ করছে। অর্থনীতির বাস্তবতা ক্রমানয়ে পরিস্থিতিকে নাজুক করছে।
‘অ্যানী কেসি ফাউন্ডেশন’ নামক আরেকটি সংস্থা জানিয়েছে যে, সন্তান লালন-পালনে হিমশিম খাওয়া এমন অবস্থা শুরু হয়েছে ১৯৯০ সাল থেকেই। তাই ঋণের দায়ে জর্জরিত হওয়ার চেয়ে সন্তান ধারণের আগ্রহ পরিত্যাগ করাকেই অধিকাংশ আমেরিকান শ্রেয় বলে বিবেচনা করছেন। ‘কলেজ, হাউজিং ও হেল্থ কেয়ার’-এই ৩ ইস্যুতে হাঁপিয়ে উঠেছেন অভিভাবকরা। সচেতন কোনো অভিভাবকই তার সন্তানের মাথায় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন না।
জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৭ শতাংশ অভিভাবককে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় অবকাশ ভ্রমণের জন্য ঋণ নিতে হচ্ছে। আর স্কুলবর্ষ শুরু করতে হয় ঋণের চাপে ৩৯ শতাংশ অভিভাবককে। জরিপে আরও উদঘাটিত হয়, সদ্য বিবাহিত দম্পতির ৬৩ শতাংশ সন্তান ধারণে বিলম্বিত করাকে শ্রেয় মনে করছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই