১২ জুলাই, ২০১৯ ২১:৪৭
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান

'দেশে দূর্নীতির চেয়ে বড় সমস্যা কাজে শ্লথ গতি'

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য :

বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কাজের শ্লথ গতি দূর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে প্রশাসনের শ্লথ গতির কারণে তা অনেক সময় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সময় নিচ্ছে অনেক বেশি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ই জুলাই) পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে বাংলা সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে মন্ত্রীকে স্বাগত জানান ক্লাব নেতৃবৃন্দ।

প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়েরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিভিন্ন চিত্রও তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে।

সিলেট বিমান বন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু, ব্রিটেনে তৈরী হওয়া মেধাবী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রজন্মকে দেশের কাজে লাগানো, নিজ এলাকাসহ বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কথা তুলে ধরতে গিয়ে এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে বিরামহীন কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী।’ 

বাংলাদেশ আর আগের অবস্থানে নেই মন্তব্য করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় দরিদ্র ও ক্ষুধার্থ দেশ হিসেবে যে পরিচয় ছিলো বাংলাদেশের, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা থেকে বেরিয়ে এসেছি আমরা। শিক্ষা, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা, সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন বাংলাদেশে আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা।’

সিলেট থেকে সরাসরি বিমান ফ্লাইট আর কতদুর? এমন অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘কাজের শ্লথ গতির কারনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তীরস্কারও করা হয়েছে। বিমান সিলেটে গিয়ে সরাসরি নামতে পারলে সিলেট থেকে সরাসরি উঠতে পারেনা কেন, এমনটি জানতে আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি। আসলে সিলেট গিয়ে যখন নামে তখন জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পথে থাকায় বিমানটি হাল্কা থাকে, এজন্য নামা সহজ হয়। কিন্তু উঠার সময় জ্বালানি ভর্তি থাকায় বিমানের ওজন থাকে বেশি। এই ওজন নিয়ে উড়তে গেলে যে রানওয়ের প্রয়োজন সেটি এখনও তৈরী হয়নি সিলেটে। তাছাড়া সিলেট থেকে জ্বালানি সংগ্রহের ব্যবস্থাও প্রয়োজন। একাজগুলো সম্পন্ন হলেই, সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে সরাসরি উড়বে বিমান।’

তার নিজ এলাকাসহ সিলেটের বিভিন্ন সড়কের বেহাল অবস্থার বিষয়েও প্রশ্নের সম্মুখিন হন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি জানান, সিলেটে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা ঠিকাদার ও কাজের লোকের অভাব। অন্য জেলা থেকে ঠিকাদার ও কাজের লোক এনে কাজ করাতে হয়। তবে কাজ চলছে, সড়কগুলোর এই অবস্থা থাকবেনা বলে সাংবাদিকদের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। 

সিলেট বিমান বন্দর সড়কে পর্যাপ্ত লাইট না থাকায় রাতের বেলা তা অন্ধকার থাকে, এমন অভিযোগও শুনতে হয় পরিকল্পনা মন্ত্রীকে। উত্তরে তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হকের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমাদের মেয়রতো খুবই করিৎকর্মা মানুষ। নিশ্চয়ই এটি উনার নজরে পড়েনি। বিষয়টি মেয়রের নজরে নিয়ে আসবো আমি, সবধরনের সহযোগিতাও করবো তাকে।’

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জমি অধিগ্রহনের ক্ষেত্রে মালিকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, মন্ত্রীর কাছে এমন অভিযোগ তুললে তা তিনি দৃঢ়তার সাথে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার এক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের তিনগুন মূল্য পরিশোধ করছে।’ এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এমন ঘটনার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগি কারো হয়তো ভূমিকা থাকতে পারে।’

মতবিনিময় সভার সমাপনি বক্তব্যে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আসায় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি এসময় ব্রিটিশ-বাংলাদেশ কুটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তী ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ২৫ বছরপূর্তী আনুষ্ঠানিক উদযাপনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।


বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর