কানাডার টরেন্টো সিটির ফেয়ারমন্ট রয়েল ইয়র্ক হোটেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত বাংলাদেশ ও কানাডার সাসকাচুয়ান প্রদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ক এক সেমিনার ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে কানাডীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য ও রপ্তানী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের আইন বিষয়ক সচিব এভারেট হিন্ডলি।
সেমিনারের শুরুতেই বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের চিত্র, বিনিয়োগ ইত্যাদির উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপরই কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান তার স্বাগত বক্তব্যে জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এবং বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রুপান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ সম্পর্কে এবং বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র সবিস্তারে উপস্থাপন করেন।
এরপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সাসকাচুয়ান প্রদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি উপস্থাপন করেন হাইকমিশনের কাউন্সেলর (বাণিজ্যিক) মো: শাকিল মাহমুদ এবং সাসকাচুয়ান প্রদেশের বাণিজ্য ও রপ্তানী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপ-মন্ত্রী জডি ব্যাঙ্কস।
সংক্ষিপ্ত বিরতির পওে শুরু হওয়া গোল টেবিল বৈঠকের প্রারম্ভে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে একটি চমৎকার দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে কানাডার সাসকাচুয়ান প্রদেশ দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অসমান্য অবদান রেখে চলেছে। মন্ত্রী এজন্য সাসকাচুয়ান প্রাদেশিক সরকার ও এ প্রদেশ হতে আগত বাণিজ্য ও রপ্তানী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের আইন বিষয়ক সচিব, রপ্তানী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপ-মন্ত্রী, সাসকাচুয়ান চেম্বার অব কমার্সেরসভাপতি ও অন্যান্য উপস্থিত প্রতিনিধিদেও ধন্যবান জ্ঞাপন করেন।
বৈঠকে মূলত এ প্রদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কিভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য সাসকাচুয়ান প্রদেশের বিনিয়োগকারীদের তিনি আহ্বান জানান। বর্তমান বিনিয়োগ বান্ধব সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগকারীদের জন্য যে সকল প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।
বৈঠকে প্রাদেশিক সহকারী উপ-মন্ত্রী, সাসকাচুয়ান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও অন্য প্রতিনিধিরা সাসকাচুয়ান ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বর্তমান বাণিজ্যি কসম্পর্ক সম্প্রসারণে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবনে তাদেও সহযোগিতার বিষয় তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে ক্যানোলাবীজ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ঔষুধ, সার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরণের ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ইত্যাদি বিষয়ে এ প্রদেশের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়ে উভয় পক্ষই আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
এ প্রদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কনসাল রবনরিস দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এ আয়োজনকে অগ্রগতির মাইলফলক হিসেবে উভয় অ লের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাই কমিশনে কমার্শিয়াল কাউন্সেলর করিন প্যাট্রিসসহ আলোচকদের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দেন এবং এ সকল বিষয়ে কানাডীয় হাই কমিশনের বর্তমান সহযোগীতার বিভিন œদিক তুলে ধরে উত্থাপিত নতুন প্রস্তাবসমূহের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের আশ্বাস দেন। এছাড়াও দু’দেশের মধ্যেকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী ট্যাক্স, উদার বাণিজ্য-নীতি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক ও অগ্রগতির বিষয়ে সভায় উপস্থিত আলোচকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপনকান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল এ্যাসোসিয়েনের সাধারণ সম্পাদক এস এম সফিউজ্জামান, বাংলাদেশ সফটওয়্যার এক্সপোর্টার এসোসিয়েশন(বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির এবং কেনচেম বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদুর রহমান প্রমুখ ।
বাণিজ্যিক কাউন্সেলর মোঃ শাকিল মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্পূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ।
বাণিজ্য মন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যে উল্লেখ করেন ক্যানোলা বীজসহ বিভিন্ন কানাডীয় কাঁচামাল বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করে পণ্যের মূল্য সংযোগ ঘটিয়ে স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে বিক্রির মাধ্যমে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগসহ বিপুল কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। তিনি কানাডীয় উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান এবং বর্তমান সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি এ বিষয়ে সকল প্রকার সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ