বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী তথা মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-ইতিহাসকে প্রবাস প্রজন্ম তথা আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে নিউইয়র্কে ৩দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’ শুরু হবে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। এ উপলক্ষে গত শনিবার রাতে জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে এক মতবিনিময় সভা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে মুজিব বর্ষ উদযাপন কমিটি’ আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব কবি কামাল চৌধুরী। প্রবাসের কবি-লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-সমাজসেবীদের সম্মিলিত এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বঙ্গবন্ধু বইমেলার পথ ধরে সামনের বছর যেন শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকলকে সম্পৃক্ত করে ‘মুজিব বর্ষে’র যাবতীয় কর্মসূচিকে ফলপ্রসূ করা যায়-সে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এই মুখ্যসচিব। তিনি বলেছেন, জাতীয়ভাবে অনুমোদিত শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-ইতিহাস গ্রন্থ যুক্তরাষ্ট্রের পাঠক, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিতে হবে প্রথম প্রজন্মকেই। ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদের মধ্য দিয়েও প্রবাসীরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন কবি কামাল চৌধুরী।
এ সময় বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা নিউইয়র্কে দায়িত্ব পালনের এক বছরে এ নিয়ে যা করেছেন তার সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। কুইন্সের দুটি লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনী গ্রন্থ সরবরাহ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষা-ভাষীর সমন্বয়ে গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ছাড়াও মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে বৈঠকের প্রসঙ্গ টানেন। বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ম্যানহাটানে বিখ্যাত একটি পার্কে বঙ্গবন্ধুর স্ট্যাচু এবং শহীদ মিনার তৈরির অনুমতি কেন পাওয়া যাচ্ছে না সেটিও অবলীলায় উল্লেখ করেন। ম্যানহাটানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে প্যারেড করার কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে তবে সে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কোন সংগঠনের মাধ্যমে-এ কথাও বলেন সাদিয়া। অনুমতি পেলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বহুজাতিক সমাজকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি/পরিকল্পনার তথ্যও প্রকাশ করেন কন্সাল জেনারেল। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সেক্টরে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রবাসীদের সাথে তার মতবিনিময় চলছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ কাজও শুরু করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মুজিব বর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সদস্য-সচিব নূরল আমিন বাবুর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন সৈয়দ মুহম্মদউল্লাহ, জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি সামাদ আজাদ, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা-চলচ্চিত্র পরিচালক আবুল বাশার চুন্নু, কবি-কলামিস্ট ফকির ইলিয়াস, কবি শামস আল মমীন, লেখক-সাংবাদিক শিব্বির আহমেদ, সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ, সাংস্কৃতিক সংগঠক লুৎফুন্নাহার লতা, মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, কবি হাসান আল আব্দুল্লাহ, মঞ্জুর কাদের,খালেদ শরফুদ্দিন, লেখক পপি চৌধুরী, আবু সাঈদ রতন, সমাজ-সংগঠক ডা. বিলকিস দোলা, শামিম আলামিন বাবু, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান, নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান প্রমুখ।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আকতার হোসেন, কৃষি সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা জামান প্রমুখ।
এ সময় জানানো হয় যে, জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু বইমেলার উদ্বোধনী কর্মসূচি শুরু হবে ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে র্যালির মধ্য দিয়ে। এদিন মুক্তিযোদ্ধা-লেখক-সাহিত্যিকরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজ স্মৃতি কথা বিবৃত করবেন। এবং মুজিব বর্ষকে কীভাবে সর্বজনীন করা যায় সে পরামর্শ নেয়া হবে।
কবি মিশুক সেলিম জানান, এটি হবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং নিবন্ধ গ্রন্থের মেলা। থাকবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে ইংরেজিতে অনুবাদ গ্রন্থকে এবং তা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত হতে হবে। মূল কথা সামনের বছরের মুজিব বর্ষকে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এটি হচ্ছে প্রস্তুতিমূলক মেলা। তিনি বলেন, ১৭ মার্চ থেকে সারাবছরই আমরা নানা কর্মসূচি নেব মুজিব বর্ষ পালনে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত প্রতিটি লেখক-সাংবাদিক-সমাজকর্মীর আন্তরিক সহযোগিতা চাচ্ছি।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব