সিটিজেন/গ্রিন কার্ড ধারীদের নিকটাত্মীয়দের অভিবাসন মর্যাদায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথ রহিত করা হলো ৬০ দিনের জন্য। ২২ এপ্রিল বুধবার অপরাহ্নে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী ২২ জুন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে এবং এর গতি-প্রকৃতি আলোকে পরবর্তীতে সময়সীমা বাড়ানো হতেও পারে।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে সোয়া দুই কোটি আমেরিকান বেকার হয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন অভিবাসীদের আগমণ আপাতত: বন্ধ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা তারা যাতে বেকার না থাকে সেজন্যে এমন পদক্ষেপ নিতে হলো। কারণ, আমি সবসময়ই আমেরিকানদের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। করোনার কারণে ২ কোটি ৬০ লাখ আমেরিকান বেকার হয়েছে। বিদ্যমান লকডাউন উঠিয়ে নেয়ার পরই সকল আমেরিকান যাতে কাজ পায় সেজন্যেই এটি করা হলো। শুধু তাই নয়, সিটিজেনদের চিকিৎসা-সেবা অব্যাহত রাখতেও আপাতত: নতুন লোক আসার প্রয়োজন নেই। ৬০ দিনের আলোকে পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হতেও পারে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
এই আদেশের বাইরে থাকবে সিটিজেন/গ্রিন কার্ড ধারীদের স্বামী/স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানেরা। গেস্ট ওয়ার্কার্স প্রোগ্রাম এবং কৃষি খামারের শ্রমিকের ভিসাও অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যেই যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গ্রিন কার্ডের আবেদন করেছেন তারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন না। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে সক্ষম চিকিৎসক/ নার্সরাও এই নির্দেশের বাইরে থাকবেন। নন-ইমিগ্র্যান্ট (ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইত্যাদি) ভিসা আগের মতোই বহাল থাকবে। ইতিমধ্যেই যারা পারিবারিক কোটায় ভিসা পেয়েছেন তারা আসতে পারবেন। আর যাদের ভিসার মেয়াদ ২২ এপ্রিল রাত ১২টার পর ফুরিয়ে যাবে, তারা আসতে পারবেন না। এই স্থগিতাদেশের ভিকটিম হলেন অর্ধ লক্ষাধিক বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের ১২ লাখ মানুষ-জানান অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা।
পারিবারিক/বিনিয়োগ/বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে খ্যাতিসম্পন্নরা গ্রিন কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর করোনা ভাইরাস বিস্তারের আশংকা থাকবে, তাই আপাতত: নতুন গ্রিন কার্ড ইস্যুর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়া হলো বলেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, এই আদেশে স্বাক্ষরের পরই বুধবার করোনা নিয়ে প্রতিদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইতিমধ্যেই বেআইনী পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই এসাইলাম প্রার্থনার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে কমিউনিটিতে। অনেকেই আদালতে যাবার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে যারা ১২/১৪ বছর অপেক্ষার পর ভিসা প্রসেসিংয়ের ফি-সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন তাদেরকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা উচিত ছিল। এ শ্রেণীর লোকজনের পক্ষে আদালতে যেতে পারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এ প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশনে অভিজ্ঞ বাংলাদেশি আমেরিকান এটর্নি ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এটর্নি মঈন চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে বলেন, ২০১৬ সালে নির্বাচনী সমাবেশ থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কার্যক্রম সীমিত অথবা বন্ধের কথা বলে আসছেন। হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হবার পর গত সোয়া ৩ বছরে অভিবাসন বিরোধী বেশ কটি নির্বাহী আদেশও জারি করেছিলেন। এর অধিকাংশই আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে গেছে। এটর্নি মঈন বলেন, এই আমেরিকা গড়েছেন অভিবাসীরা। আমেরিকাকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করতে অভিবাসীরা মেধা ও কঠোর শ্রম দিচ্ছেন এখনও।
এটর্নি মঈন বলেন, সামনের নভেম্বরের নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে করোনা তান্ডবকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করেছেন ট্রাম্প। তিনি করোনার দোহাই দিয়ে অভিবাসন বন্ধের অভিসন্ধি পূরণের পথে হাটছেন। ৬০ দিন অতিবাহিত হবার পর হয়তো এই আদেশকে স্থায়ী করার পদক্ষেপ নেবেন, যা হবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি। তাই নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজকে হঠাতে বিবেকসম্পন্ন সকল আমেরিকানের ঐক্যের বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, পারিবারিক কোটায় গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রীণকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। একইকোটায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরতদের মধ্যে গ্রীণকার্ড পেয়েছেন আরো ৫ লাখ ৮০ হাজার জন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন