জর্জিয়া স্টেট সিনেটর হিসেবে পুননির্বাচনে বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান চন্দন ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ৯ জুন দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের এ নির্বাচনে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ এ তার বিরুদ্ধে কেউ মাঠে নামেননি। এমনকি রিপাবলিকান পার্টি থেকেও কেউ প্রার্থী হননি। এর ফলে ৩ নভেম্বরের মূল নির্বাচনে তাকে ভোট প্রার্থনার প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র ঐদিনটি অতিবাহিত হলেই দ্বিতীয় টার্মের সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিপুরের শরারচর গ্রামের সন্তান শেখ রহমান চন্দন (৬০)।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শেখ রহমান চন্দন স্টেট সিনেটর হয়েছেন (যিনি শেখ রহমান নামেই সমধিক পরিচিত)। আরো উল্লেখ্য, তার সিনেট ডিস্ট্রিক্টে লোক সংখ্যা প্রায় দু’লাখ। এরমধ্যে ৩৭% হিসপ্যানিক, ৩৩% কৃষ্ণাঙ্গ, ২২% শ্বেতাঙ্গ, ১২% হলেন এশিয়ান। এই এশিয়ানের মধ্যে মাত্র দেড় হাজার হলেন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমান।
এমন একটি এলাকা থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দু’বছর টার্মের এ আসনে পুনরায় বিজয়ী হবার নেপথ্য কারণ জানতে চাইলে ১৩ জুন শনিবার রাতে সিনেটর শেখ রহমান চন্দন এ সংবাদদাতাকে বলেন, ৩৪ বছরেরও অধিক সময় যাবত আটলান্টা সিটির গুনেট কাউন্টিতে বাস করছি। সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-ভাষা সামনে আনিনি। মানুষ হিসেবে সকলের আপদে-বিপদে থেকেছি। কমিউনিটিভিত্তিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছি সকলের সাথে। তারই সুফল পাচ্ছি নির্বাচনে।
উল্লেখ্য, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর হিসেবে এই প্রথম একজন মুসলমান জয়ী হয়েছেন। তিনি কাজ করছেন কৃষি এবং কঞ্জ্যুমার এফেয়ার্স কমিটি, গভর্নমেন্ট ওভারসাইট কমিটি, আরবাণ এফেয়ার্স কমিটি এবং স্টেট ইন্সটিট্উিশন এ্যান্ড প্রপার্টি কমিটিতে।
জর্জিয়া স্টেট ডেমক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসেবে দু’বছর যাবত ডিএনসি(ডেমক্র্যাটিক পার্টি ন্যাশনাল কমিটি)তে কাজ করছেন। সেই কমিটির পুননির্বাচনে আবার লড়ছেন শেখ রহমান চন্দন। এটি অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন শনিবার।
উল্লেখ্য, ডিএনসিতে তিনিই প্রথম বাংলাদেশী এবং মুসলমান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বয়স ছিল ১০ বছর, তাই সরাসরি অংশ নিতে পারেননি। তবে তার বাবা নজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় তাকে পাক হানাদাররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে নির্যাতন সইতে হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। নর্থ ক্যারলিনায় পিডমন্ট কম্যুনিটি কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষা ব্যয় সংগ্রহের জন্যে ডিশওয়াসারের চাকরি করেছেন ঘণ্টায় ৩.৩৫ ডলার মজুরিতে।
এরপর অর্থনীতি এবং গ্লোবাল স্টাডিজে ব্যাচেলর করেছেন ১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া থেকে। জীবিকার জন্যে চাকরির পাশাপাশি নাগরিক অধিকারের জন্যে সম্পৃক্ত হন এনএএসিপি, ন্যাশনাল এ্যাকশন নেটওয়ার্ক, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়য়ন, এবং সবশেষে ‘এলায়েন্স ফরস সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ তথা আসালের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
জীবিকার তাগিদে রেস্টুরেন্টের ডিশওয়াসার থেকে ম্যানেজার এবং পরবর্তীতে পিজা হাটের কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ হিসেবেও কাজ করেছেন এই সিনেটর শেখ রহমান। ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক এবং আসালের জর্জিয়া চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন এ সংবাদদাতাকে জানান, এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের মধ্যে শেখ রহমান চন্দন হলেন সর্বোচ্চ আসনে দায়িত্বরত। ৯ জুনের ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে জর্জিয়াস্থ কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে নাবিলা ইসলাম এবং রশিদ মালিকও লড়েছেন। তারা ভোট পেয়েছেন নাবিলা-১৩% এবং মালিক-১০%। অর্থাৎ উভয়েই হেরে গেছেন। এছাড়া, স্টেট সিনেটে ডিস্ট্রিক্ট-৪১ থেকে জাহাঙ্গির হোসেন পেয়েছেন ১৯% ভোট। ডিস্ট্রিক্ট-৪৮ এ জসিমউদ্দিন পেয়েছেন ২২% ভোট। এভাবেই বাংলাদেশীরা মূলধারায় ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে শেখ রহমানের মতো জনপ্রিয়তা অর্জনে অন্য বাংলাদেশী-আমেরিকানরাও সক্ষম হবেন বলে সুধীজনের ধারণা।
এদিকে, পেনসিলভেনিয়া স্টেট অডিটর জেনারেল পদে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে বাংলাদেশী আমেরিকান ড. নীনা আহমেদ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে এক লাখ ১২ হাজার ৩১ ভোট বেশী পেয়ে জয়ী হয়েছেন বলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভোট গণনা শেষে ১২ জুন ইলেকশন বোর্ড জানিয়েছে। এত বিশাল বিজয় এর আগে এ পদে আর কোন প্রার্থীর ছিল না বলেও রাজনীতিকরা উল্লেখ করেছেন। ৩ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের দিনই এ পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। সেখানে রিপাবলিকান পার্টির একজন প্রার্থী থাকলেও এই স্টেট হচ্ছে ডেমক্র্যাটদের। তাই ড. নীনার বিজয়ের ঘোষণা কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন