রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম শুধু একজন কূটনীতিক নন, একজন শিল্পীও বটে। উজ্জীবিত এবং ধীশক্তির অধিকারী একজন কূটনীতিক তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় তিন বছরজুড়ে। পারস্পরিক বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় সাংস্কৃতিক যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছেন, তাতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি তাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতির যাদুকর বলছেন। একের পর এক দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোতে দেশের কথা শুধু তুলে ধরছেন না, ইতিবাচক কাজের জন্যই প্রায়শই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় আরিরাং টেলিভিশনে সম্প্রতি বাউল গানের একটি ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে 'ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা' গানটি গেয়ে তাক লাগান টিভি উপস্থাপককে। রাষ্ট্রদূতের কণ্ঠে গান শুনে উপস্থাপক লী জং অবলীলায় বলে উঠলেন, 'রিয়েলি বিউটিফুল ভয়েস!'
২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ১৫তম বিসিএস ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ‘ক্যারিয়ার ডিপ্লোমেসি’র বাইরে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে ভিনদেশি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও করছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তার সুরের মূর্ছনা একদিকে যেমন মোহিত করছে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের অন্যদিকে ধন্য করছে প্রবাসী বাঙালিদেরকে।
শৈশব থেকেই সুর আর স্বরের সঙ্গে সখ্যতা আবিদা ইসলামের। সুরের মায়াজালে আকৃষ্ট হয়ে গানকে জীবনের ধ্যান-জ্ঞান-ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সুরের মূর্ছনায় মানুষকে মোহিত করার পাশাপাশি পেশাদার কূটনীতিকের পরিচয়ে এই জগতে পার করেছেন জীবনের ২৫টি বছর। কূটনীতিকের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতা, লন্ডন, কলম্বো ও ব্রাসেলসসহ যেখানেই গেছেন সেখানেই বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের তালিকাভুক্ত গুণী এ শিল্পী। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কূটনীতি চালিয়ে গেছেন তিনি সমানতালে। বিদেশে সফলভাবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিচ্ছবি তিনি তুলে ধরতে পেরেছেন। শৈশব থেকেই তাঁর শিল্পীসত্তা এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে ‘কূটনীতিক’ আবিদা ইসলামের পাশাপাশি যে কেউ অবলীলায় তাকে ডাকতে পারেন ‘শিল্পী’ আবিদা ইসলাম নামেও।
পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে দূতাবাস পরিচালনা করছেন তিনি। আবেগ ও শিল্পীসত্তাকে তো কোনও নিয়মের সীমানায় আটকে রাখা যায় না কিংবা কোনও ফ্রেমে ব্র্যাকেটবন্দী করা যায় না। তাই কূটনৈতিক জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছেন যা প্রবাসীদেরকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা আর সাহস যোগাচ্ছে।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন হোক, কিংবা রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী, জাতির জনকের জন্মদিন, নারী দিবস ও বসন্ত বরণ হোক, সুর যেন এই রাষ্ট্রদূতের নিত্যকার সারথী এবং প্রতিক্ষণের আরাধনা। মোদ্দা কথা, প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাক লাগানো ঘটনার সূচনা করেন রাষ্ট্রদূত নিজেই। প্রতিবারেই একেবারে ভিন্ন আমেজে। এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পাশাপাশি নিজেও সুরের মূর্ছনা তৈরি করেন। তাঁর মিষ্টি ও সুরেলা কণ্ঠে গান শুনে মোহিত হন উপস্থিত দর্শকরা।
সিউলে একবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবের শুরুতেই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি হারমোনিয়ামে সুর তোলার পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে গেয়ে উঠেন। তার সুরেলা কণ্ঠে এ গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান বিদেশী মিশনের কূটনীতিকবৃন্দ এবং কোরিয়ান অতিথিসহ উপস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। শুধু পহেলা বৈশাখই নয়, সব উৎসব আয়োজনেই তিনি দর্শকদের বিমোহিত করেছেন তার কণ্ঠ দিয়ে।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের মতে, সংগীত যেভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে, অন্য কোন স্বর-শব্দই তা পারে না।
এভাবেই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে এবং লাল সবুজের বাংলাদেশকে ভিনদেশে তুলে ধরছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা