২৮ মে, ২০২২ ০৯:৪৮

শেখ রহমান এবং নাবিলা জর্জিয়ায় নতুন ইতিহাস রচনার পথে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শেখ রহমান এবং নাবিলা জর্জিয়ায় নতুন ইতিহাস রচনার পথে

শেখ রহমান ও নাবিলা ইসলাম

ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান এবং নাবিলা ইসলাম। জর্জিয়া স্টেট সিনেটে তৃতীয় মেয়াদের জন্য নিশ্চিত বিজয়ের পথে রয়েছেন সিনেটর শেখ রহমান। অপরদিকে, ডেমক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাবিলা ইসলামও জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। 

২৪ মে অনুষ্ঠিত ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে শেখ রহমান এবং সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে নাবিলা রহমান বিজয়ী হয়েছেন। উভয় আসনেই ডেমক্র্যাট ভোটারের আধিক্য থাকায় নভেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত। অর্থাৎ দু’বছর আগের মত এবারও শেখ রহমান হয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই তৃতীয় মেয়াদের জন্যে নির্বাচিত হবেন। নাবিলা হবেন প্রথম মেয়াদের সিনেটর। নাবিলাকে একজন রিপাবলিকান প্রার্থীর সাথে লড়তে হলেও ডেমক্র্যাটদের মধ্যে সৃষ্ট ঐক্য অব্যাহত থাকলে তার বিজয় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে নির্বাচন-বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন। 

নাবিলা বলেন, জর্জিয়া স্টেটের বাংলাদেশি তথা অভিবাসী সমাজের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পার্লামেন্টে। তিনি সর্বস্তরের ভোটারের প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রাইমারিতে বিজয় প্রদানের জন্যে। এই ধারা নভেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনের সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন নাবিলা। 

অপরদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৩ বছর বয়সী শেখ রহমানকে পাক হায়েনার দল যুদ্ধবন্দি করেছিল। তাঁর বাবা শেখ নজিবুর রহমান তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের পদস্থ কর্মকর্তা পদে থেকেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আগরতলায় ‘জয় বাংলা যুব শিবির’র সুপারভাইজার হয়েছিলেন মুুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সময়। সে কারণে শেখ রহমানকে জিম্মি করা হয়েছিল। বর্বরতা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তবুও হাল ছাড়েননি বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে। বাঙালিদের স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত শেখ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা শেষে নানা পথ-পরিক্রমায় ডেমক্র্যাটিক পার্টির সাথে যুক্ত হয়েছেন। শিক্ষা চালিয়ে নিতে রেস্টুরেন্টের ডিশওয়াশারের কাজও করেছেন ঘণ্টায় ৩.৩৫ ডলার মজুরিতে। সে সব দিনের কথা ভুলেননি। সন্তানদেরকেও জানিয়েছেন কঠোর পরিশ্রমে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে উপনীত হবার তথ্য। স্টেট সিনেটে জয়ী হবার পর শেখ রহমান নিজ এলাকা তথা জর্জিয়ার মানুষের অধিকার-মর্যাদা নিয়ে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বার্থেও কাজ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উপলক্ষে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে পৃথক দুটি রেজ্যুলেশন পাশ হয় তারই উদ্যোগে। 

শেখ রহমান প্রবাস প্রজন্ম এবং প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, অধিকার-মর্যাদার প্রশ্নে মার্কিন রাজনীতিতে জড়িত হবার বিকল্প নেই। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে এলাকার সকল মানুষের সমর্থন লাভের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ কোন জাতি-গোষ্ঠি-বর্ণ-ভাষার মানুষের হয়ে নির্বাচনে বিজয় লাভ করা কঠিন। এটি সকলকে মনে রাখতে হবে। তাহলেই বাঙালিরা অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো। 

শেখ রহমান বলেন, আমি এলাকার ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞ এজন্যে যে, তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন এবারও। 

উল্লেখ্য, শেখ রহমান হচ্ছেন জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম এশিয়ান এবং প্রথম মুসলমান সিনেটর। এজন্য বাইডেন প্রশাসনেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দলীয় প্রাইমারিতে জয়ী হবার মধ্যদিয়ে নভেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনেও শেখ রহমানের বিজয় নিশ্চিত। অর্থাৎ নভেম্বরের এই প্রত্যাশা পূরণ হলে যুক্তরাষ্ট্রের কোন স্টেট পার্লামেন্টে এই প্রথম একইসাথে দুই বাংলাদেশি আমেরিকানের অধিষ্ঠিত হবার ঘটনা ঘটবে।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর