গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, প্রতিবেশী দেশের আধিপত্যবাদী চক্রান্ত প্রতিরোধ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক অধিকার, ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি বাংলাদেশি সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে গঠনমূলক আলোচনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়া স্টেটে।
১৫ ডিসেম্বর এম্পায়ার হোম হেলথ সার্ভিস’র অডিটোরিয়ামে লেখক, কবি ও সংগঠক সামছুদ্দীন মাহমুদের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রবাসে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারিরা।
সংবাদদাতা সুব্রত চৌধুরী ডিসি থেকে জানান, প্রবাসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে সমৃদ্ধ বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন মেজর (অব.) মনজুরুল হক, ড. নজরুল ইসলাম, নওশের আলী, রফিকুল হক, আনিস আহমেদ, শামীম সেলিমুদ্দীন, খুরশিদ সাব্বীর, হাসান চৌধুরী, কবিরুল আলম, কচি খান, স্যাম রিয়া, আকতার হোসেন, মেজর (অব.) শাফায়াত আহমাদ, ফাতেমা সিদ্দীক, শায়লা মনজুর, মুশফিকা হক, শার্লিন সেলিম, আবু সেলিমুদ্দীন, তাবাস্সুম রহমান, ডা. সাহিনা আকতার, আফসা রহমান প্রমুখ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি নিরপেক্ষ ও বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন উপস্থিত সকলেই।
মেজর (অব.) মনজুরুল হক তার নাতিদীর্ঘ একটি পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘একটি দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ফ্যাসীবাদি হাসিনার পতন হয়েছে কিন্তু সুষ্টু পরিকল্পনা ও লোকবলের অভাবে বর্তমান সরকার এ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। অন্যদিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীচক্রও তৎপর।’ এ অবস্থায় এ সরকারকে সঠিক কর্মপন্থা প্রণয়ন করার জন্য তিনি বেশ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনে তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না, আগামী প্রজন্মের এ শক্তিতে দেশ পরিচালনায় যে কোন সহায়তা করার জন্য এ ফোরাম প্রস্তুত।
নওশের আলী বলেন, বর্তমান ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যমত্য হতে হবে। না হলে দেশে এ আধিপত্যবাদ যে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
রফিকুল হক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের একটি উদ্যোগের খুবই দরকার। আমরা যারা প্রবাসে বাস করি, আমাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে হবে।
আনিস আহমেদ বলেন, আমাদের মার্কিন রাজনীতিবিদদের সাথে নিয়ে এ ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনকে এ বিষয়ে সঠিক খবরাখবর প্রদান করতে হবে।
শামীম সেলিমুদ্দীন বলেন, ছাত্র আন্দোলন কেবল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল না, এ আন্দোলন ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ সংগ্রাম। এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
খুরশীদ সাব্বির বলেন, এ প্রজন্ম হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদকে পরাস্থ করেছে, তাই ভারতীয় আদিপত্যবাদিদের খেয়াল রাখতে হবে, তারা বাংলাদেশের উপর নজর দিলে কিভাবে তাদের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে হয়।
হাসান চৌধুরী বলেন, এই প্রথম ডিসি মেট্রো এরিয়ার এতো বুদ্ধিজীবি ও প্রফেশনাল লোকজনের সমাগম দেখলাম যারা নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করছে। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে এ ধরনের একটি ফোরামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
কচি খান এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের ভালো কাজের সহায়তা ও খারাপ কাজের সমালোচনা করা উচিত।
আকতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফ্যাসিবাদ গেছে কিন্তু তাদের দোসররা এখনো দেশে বিরাজমান। এদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
মেজর (অব.) শাফায়াত আহমাদ বলেন, দেশ হাসিনা মাফিয়ার হাত থেকে মুক্ত হয়েছে সত্য কিন্তু পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। আমরা যারা প্রবাসে আছি তারা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। যাতে তারা একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারে এবং দেশের প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার সম্পাদন করতে পারে।
সামছুদ্দীন মাহমুদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্ঞানীগুণিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারাও বিভিন্নভাবে এ সরকারকে সহায়তা করতে পারে। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ও ভবিষ্যতে যে কোন গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে এ ফোরাম কাজ করবে। ফ্যাসিবাদ, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ ফোরাম সবসময় সক্রিয় থাকবে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের এবং ’২৪ এর গণআন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এরপর খুরশীদ সাব্বীর এর পরিচালনায় বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের গান “ও আমার দেশের মাটি” সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে স্যাম রিয়ার কিচেনের মজাদার খাবার বিশেষ করে চিকেন বিরিয়ানি, পায়েস, রসগোল্লা ও সুরাইয়া’স কিচেনের ভাপা পিঠা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন