যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর (ডেমক্র্যাট) শেখ রহমান বললেন, ঘুষ-দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে সব সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তা সর্বগ্রাসী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ থেকে মুক্তির বিকল্প নেই। আশা করছি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের মতো একজন ভালো মানুষের নেতৃত্বে দুর্নীতি সমূলে নির্মূল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে। সিনেটর রহমান উল্লেখ করেন, ক্রিমিনালরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে জনগণতে সচেতন হতে হবে। ভোটারগণেরও দায়িত্ব রয়েছে ভালো মানুষকে পার্লামেন্টে পাঠানোর ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে সকলের জন্মভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দল নয়, ভালো একজন মানুষকে নির্বাচিত করার জন্যে সাহসী হতে হবে। আর এজন্যে সামনের ৫০ বছর পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার বহালের উপযোগী সংস্কার করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু থাকলে কখনোই প্রত্যাশিত নির্বাচন সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন ঝানু রাজনীতিক শেখ রহমান।
জর্জিয়া সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে চতুর্থ মেয়াদের জন্যে নির্বাচিত সিনেটর শেখ রহমান ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রদত্ত একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রিয় মাতৃভ’মির কল্যাণে বিগত দিনের মত সামনের দিনগুলোতেও সাধ্যমত কাজের সংকল্প ব্যক্ত করলেন। কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ রহমান বলেন, মার্কিন রাজনীতির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণের সাথে বিদ্যমান সম্পর্ককে সবসময়ই প্রিয় মাতৃভূমির কল্যাণে ব্যবহার করে আসছি। এজন্যে আমি কখনোই ঢাকঢোল পিটাইনি। জন্মভ’মির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই কাজের চেষ্টা করি।
জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম মুসলমান এবং প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে নির্বাচিত সিনেটর শেখ রহমান বলেন, মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে বেড়াতে চাই। আত্মীয়-স্বজনেরা আছেন। একটি বিষয় আমাকে সবসময় ব্যথিত করে। আর তা হচ্ছে মামলার নামে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য। বিচার বিভাগের লোকজনও ঘুষ-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল বহু বছর ধরে। শেখ রহমান উল্লেখ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের লোকজনকে ভালোই মনে হচ্ছে। অনেকের সাথে আমিও আশাবাদি যে, প্রশাসনিক দুর্নীতির সাথে পুলিশের দুর্নীতিও কমাতে তারা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন।
লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে বাংলাদেশী আমেরিকানের সংখ্যা কোনভাবেই ৭ শতজনের বেশী নয়। আর দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকান ভোটারের সংখ্যাও দুই হাজারের নিচে। এমনি অবস্থায়ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোটে বারবার কীভাবে বিজয়ী হচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে সিনেটর শেখ রহমান বললেন, আমি এলাকার সবার জন্যে কাজ করি। সকল ভাষা, বর্ণ অথবা গোত্রের মানুষের প্রয়োজনে আমাকে তারা কাছে পান। দুঃখ-দুর্দশায় অকৃপণভাবে আমি পাশে থাকি। এটাই আমার বিজয়ের মূল রহস্য। বিশেষ কোন গোষ্ঠি নয়, এমনকি অন্য দলের লোকজনকেও আমি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। এজন্যে সকলেই আমাকে আপনভাবে এবং ভোটের সময় সমর্থন দেন। জর্জিয়া পার্লামেন্টে একমাত্র মুসলমান, একমাত্র বাদামি হিসেবে নানা ইস্যুতে কাজের সময় কী বৈরী পরিস্থিতির ভিকটিম হোন? জবাবে শেখ রহমান বলেন, কখনোই তা মনে হয়নি। অধিকন্তু অন্য সকলেই আমার ইস্যুকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভোটেও পাশ করিয়েছেন। সিনেটর শেখ রহমান বললেন, আমি পরিবেশ, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে আসছি। এসব সর্বজনীন বিধায়, সচেতন ভোটারের বড় একটি অংশ আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ