শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

যে দোকানে ৫০ পয়সায় শিঙ্গাড়া মেলে

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

যে দোকানে ৫০ পয়সায় শিঙ্গাড়া মেলে

সময় ও জিনিসের চাহিদার সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন খাবারের। কিন্তু ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে দাম বাড়েনি সাতক্ষীরার আব্দুল মালেক বিশ্বাসের দোকানের মুখরোচক শিঙ্গাড়া ও পরটার। স্বাধীনতার পর থেকে আব্দুল মালেকের দোকানে বিক্রি হচ্ছে আট আনার ঐতিহ্যবাহী শিঙ্গাড়া ও এক টাকার পরটা।  যেখানে বর্তমান সময়ে পঞ্চাশ পয়সার প্রচলন আর নেই বললেই চলে। আর ১ টাকার  নোটের ব্যবহারও প্রায় বন্ধের পথে। সেখানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নে শ্রীরামপুর বাজারের মালেক বিশ্বাসের  দোকানে দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শিঙ্গাড়া ও পরটা।

এখানকার ভাজা শিঙ্গাড়া সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে শিঙ্গাড়া কিনতে। চাহিদাও আছে বেশ। কড়াই থেকে গরম শিঙ্গাড়া তুলতেই লাইন পড়ে যায় এখানে। আবার অনেকে আসে এই আট আনার দোকান দেখতে। আট আনার শিঙ্গাড়ার এত চাহিদা যে মালেক বিশ্বাস সরবরাহ করে পারেন না। সকাল ও বিকালে ভিড় জমে থাকে দোকানটিতে।

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কখনো বাড়েনি এই শিঙ্গাড়া ও পরটার দাম। শ্রীরামপুর বাজারের ছোট্ট এই ভাজার দোকানটি স্থানীয়দের কাছে এখন পরিচিত আট আনার দোকান (৫০ পয়সা) নামে। একটি আলুর শিঙ্গাড়া যে কোনো দোকানে বিক্রি হয় চার থেকে ৫ টাকায়। অথচ এই দোকানে শিঙ্গাড়া বিক্রি হয় মাত্র ৫০ পয়সা মূল্যে। সঙ্গে আছে এক টাকার পরটা। তার দোকানে এর বাইরে বিক্রি হয় আলুর চপ ও জিলাপি।

এ ব্যাপারে শিঙ্গাড়া কিনতে আসা ভোমরা গ্রামের ইবাদুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতার পর থেকে মালেকের এই দোকান থেকে শিঙ্গাড়া কিনি। এর আগে তার বাবা জলিল উদ্দিনের নিকট থেকে শিঙ্গাড়া কিনতাম। তার মৃত্যুর পর থেকে ছেলে আব্দুল মালেক বিশ্বাস দোকানটি দেখভাল করছেন। তবে সেই শুরু থেকেই এখানকার শিঙ্গাড়ার দাম আট আনা।

তবে বর্তমানে শিঙ্গাড়ার সাইজ একটু ছোট হলেও কখনো দাম বাড়েনি।

হাফিজুর রহমান, পলাশ ও মুকিত নামে তিন যুবক জানালেন, আব্দুল মালেক ভাইয়ের আট আনা দামের তেলে ভাজা মচমচে আলুর শিঙ্গাড়া অত্যন্ত মুখরোচক। তাই প্রায় সাতক্ষীরা থেকে কুলিশ্রীরামপুর নামে এই বাজারের মালেক ভাইয়ের হাতের তৈরি শিঙ্গাড়া খেতে আসি।

একই গ্রামের অপর বাসিন্দা আকবর আলী জানান, এখানে এক টাকা দামের পরটা দিয়ে পাঁচ টাকার মধ্যে সকালের নাস্তাও করা যায়।

স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়দা ও তেলের যে দাম তাতে আমরা এত কম দামে ভাজা বিক্রি করতে পারি না। তিনি কীভাবে এত কম দামে বিক্রি করেন, তা উনিই বলতে পারবেন।’

৫০ পয়সার শিঙ্গাড়ার দোকানের মালিক মালেক বিশ্বাস বলেন, ‘ব্যবসার শুরুতে লাভ বেশি হতো। সে সময় এই ব্যবসার লাভের টাকায় ২ বিঘা জমি কিনেছিলাম। সেই জমি ইজারা দিয়ে এবং শিঙ্গাড়া ও পরটা বিক্রির লাভের টাকা দিয়েই আমার সংসার চলেছে। দুই ছেলেদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছি। এই দোকানের টাকায় বড় ছেলে মাসুদ রানাকে অনার্স পাস করিয়েছি। আর ছোট ছেলে আকবর হোসেন স্মরণ সবে এইচএসসি পাস করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হয় না। ব্যবসাটা খুব কষ্টে ধরে রেখেছি। এত কম দামে খাবার বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকবে তবে আমার দোকানে খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব কাজ আমি একাই করি। আমার কোনো কর্মচারী নেই। নিজের দোকান তাই দোকান ভাড়াও লাগে না। এটি আমার বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা। তার মৃত্যুর পর থেকে বাবার এই ব্যবসার প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা ধরে রাখার জন্যই মূলত ৫০ পয়সার এই ব্যবসাটা এখনো চালাচ্ছি। এতে আমার স্বল্প আয় হলেও পরিবারের সদস্যরা খুশি।

সর্বশেষ খবর