শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়ুদূষণ হুমকিতে সারা বিশ্ব

বিশুদ্ধকরণের উদ্যোগ পাল্টে দিতে পারে সব

শনিবারের সকাল ডেস্ক

বিশুদ্ধকরণের উদ্যোগ পাল্টে দিতে পারে সব

বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁঁকি তৈরির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে হৃদযন্ত্রের অসুখ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুস সংক্রমণ ও ক্যান্সারের মতো রোগে ভুগছে মানুষ। বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয় বায়ুদূষণ তার মধ্যে পঞ্চম। ২০১৭ সালে ৪৯ লাখ মানুষ দূষিত বায়ুর কারণে মারা গেছে। মোট ১৪.৭ কোটি বছর সুস্বাস্থ্যে কাটানোর সুযোগ হারিয়েছে।

একটি দেশের বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী তা পরিমাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লি­উএইচওর মানদন্ড রয়েছে। সে অনুযায়ী ৯০ ভাগ মানুষই এমন অঞ্চলগুলোতে বাস করে যেখানকার বায়ু সুস্বাস্থ্যের উপযোগী নয়। ডব্লি­উএইচওর সবচেয়ে নিচের লক্ষ্যমাত্রাটিও পূরণ করতে পারছে না এমন এলাকায় বাস করে অর্ধেকের বেশি মানুষ।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায়। ডব্লিউএইচওর মাত্রা অনুযায়ী ২০১৭ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল নেপালে। এরপর রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এই অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু আছে ভুটানে। ডব্লি­উএইচওর নিচের মাত্রাটির কাছাকাছি তাদের অবস্থান। অঞ্চল ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার পরে আছে সাব সাহারা আফ্রিকা।

ডব্লি­উএইচওর মানদন্ড অনুযায়ী বিশ্বের যেসব দেশের শতভাগ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে তার একটি বাংলাদেশ। একই পরিস্থিতি পাকিস্তান, ভারত, চীন, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোতেও।

দূষিত বায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ুদূষণে মারা গেছে। প্রথম চারটি দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া।

এদিকে এই সময়ে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ধুলায় ধূসর রাজধানী। বাতাসে ভাসছে ধুলা আর ক্ষতিকর উপাদান। এই দূষণ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে  মৌসুমের শুরুতেই। বায়ুর মাননিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর শীর্ষ বায়ুদূষণের শহরের একটি ঢাকা। ভারতের ‘গ্যাস চেম্বার’ আখ্যা পাওয়া দিল্লি­র বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়ে পড়েছে ঢাকার বাতাস। বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী টানা তিন দিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল ঢাকা। বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়াল প্রতি দিনই বায়ুর মান নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। এ তথ্য প্রকাশ করা হয় প্রতি ঘণ্টায়।

প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি শহরের বাতাস কতটুকু বিশুদ্ধ বা দূষিত সে সম্পর্কে তথ্য দেয়। এ ছাড়া এ ধরনের বাতাসে কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তাও জানায়। একিউআই সূচকে ৫১ থেকে ১০০ স্কোর পাওয়ার মানে হলো বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য। এয়ার ভিজুয়াল অনুসারে, সম্প্রতি ঢাকার স্কোর ছিল ২২৭, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। সকাল আটটার দিকে এই স্কোর ছিল ২৫২। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ দূষিত বাতাসের শহরগুলো হচ্ছে যথাক্রমে উলানবাটার, মুম্বাই, লাহোর, দিল্লি­, কিয়েভ, সারায়েভো, কাঠমান্ডু, কলকাতা ও চেংদু। বায়ুমান যাচাই বিষয়ক অপর এক প্রতিষ্ঠান এয়ারনাউ অনুসারে, কোনো শহরের একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকলে ওই শহরের বাসিন্দারা নানা ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। এ দিয়ে বায়ুর মান নিয়ে গতকাল ঢাকায় আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।  বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয় বলে মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, ৫ এবং ৬ নভেম্বর বায়ু দূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও তৃতীয় স্থানে পাকিস্তানের অন্যতম শহর লাহোর। পর্যবেক্ষণ বলছে, বছরের প্রায় ২০০ দিন ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর থাকে। সে দিক বিবেচনায় দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।

বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যহানি আর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদন বলছে এখন বিশ্বে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, গড়ে তারা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ মাস কম আয়ু পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় যা ৩০ মাস। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে গড় আয়ুও বাড়বে।

স্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্চিত করার সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে বাংলাদেশ। জন্ম নেওয়া শিশুদের গড় আয়ু তখন ১.৩ বছর বেড়ে যাবে। এমন সুবিধা পাওয়া  দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে থাকবে ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। তাদের গড় আয়ু ১ বছর  বেড়ে যাবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক নানা দেশে বায়ুদূষণ রোধে কিছু উদ্যোগের আদ্যোপান্ত।

সর্বশেষ খবর