কুষ্টিয়া সদরের বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়ার সেই মসলা গ্রাম সফলতার দ্বারপ্রান্তে। সড়কের পাশে লাগানো দারুচিনি, তেজপাতাসহ মসলার গাছের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টিকে গেছে এসব গাছ। আর লাভ পেয়ে বাড়ির আঙিনা, উঠান, পুকুর পাড়সহ পতিত জায়গায় ব্যাগে বা বস্তায় আদা ও হলুদের চাষ বাড়াচ্ছেন কৃষক। তারা লাভ পাচ্ছেন পিঁয়াজ-রসুন, ক্যাপসিকাম, গোল মরিচ, জিরা ও মৌরি চাষেও।
বছরখানেক আগে রাস্তার পাশে রঙিন খাঁচায় এমন সারি সারি দারুচিনি, তেজপাতাসহ মসলার গাছ লাগিয়ে শুরু হয় মসলা গ্রাম প্রকল্প। দিনে দিনে খাঁচার সংখ্যা বেড়েছে, ছাড়িয়ে গেছে ৬ হাজার। দু-একটি গাছ মারা গেলে বা খাঁচা নষ্ট হলে আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে পরিচর্যা করেন গ্রামের মানুষই। বড় হতে থাকা এসব মসলার গাছ নিয়ে আশাবাদী তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ বলেন, পলিনেটে চারা তৈরি করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে পিঁয়াজ-রসুন, ক্যাপসিকাম, গোল মরিচ, জিরা ও মৌরিসহ দরকারি ১৩ পদের মসলার। কৃষকের বেশি আগ্রহ উঠান, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়সহ পতিত জায়গায় জিও ব্যাগ ও বস্তায় আদা-হলুদের চাষ। পাঁচ বছরের এ প্রকল্পে এক বছরেই লাভও পেয়েছেন তারা।
গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে ৩৬টি বস্তায় বাড়ির আঙিনায় আদা চাষ করেছিলাম। ২১ কেজি আদা হয়েছিল। ভালো দামে বিক্রি করি। এবার ৫০০ বস্তায় আদা লাগিয়েছি। প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে পাওয়া যাবে আশা করি। ২০০ টাকার ওপরে কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারছি। পলিনেটে পিঁয়াজের চারা তৈরি হচ্ছে এগুলো লাগানো হবে। সারা বছরই এখন আমরা ব্যস্ত।
কৃষক নূর আলম বলেন, আদা, পিঁয়াজ-রসুন, তেজপাতা, দারুচিনি, চুই ঝাল চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি করা হচ্ছে। প্রথমে মসলার চারা সরকারই দিয়েছে। তারা জিও ব্যাগও দিয়েছে। এবার নিজ উদ্যোগেই অনেক বেশি বস্তায় চাষ করছি। গ্রামের সব কৃষকই এখন মসলার চাষে নেমেছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ায় এ মসলা গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশে এ একটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশের এসব চারা গাছ ঠিকমতো বড় হলে আগামী বছর থেকে তেজপাতা তুলতে পারবেন গ্রামের মানুষ, দারুচিনি নিতে পারবেন আরও এক বছর পর।