৪ হাজার বছর আগে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক রহস্যময় মহামারি (প্লেগ) নিয়ে নতুন তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা মনে করছেন, গৃহপালিত পশু—বিশেষ করে ভেড়া—তখন মানুষের কাছে এই রোগ ছড়ানোর সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছিল।
খবর অনুসারে, রাশিয়ার আরকাইম নামের প্রত্নস্থলে খননকাজে ব্রোঞ্জ যুগের অনেক পশুর হাড় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরোনো একটি গৃহপালিত ভেড়ার দাঁতে পাওয়া যায় ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস (Yersinia pestis) ব্যাকটেরিয়ার জিনোম—যেটি প্লেগ রোগের কারণ। এই জীবাণুর আধুনিক রূপই ছিল মধ্যযুগের ভয়ঙ্কর ‘ব্ল্যাক ডেথ’ (১৪শ শতকের মহামারি)।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, এতদিন প্রাচীন প্লেগের ডিএনএ কেবল মানুষের হাড় থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। প্রাণীতে এই জীবাণুর উপস্থিতি প্রথমবারের মতো প্রমাণিত হলো, যা প্রাচীন মহামারির বিস্তার বোঝার ক্ষেত্রে বড় সূত্র দিল।
প্রাচীন সংক্রমণের ধরন
৪ হাজার বছর আগে এই ব্যাকটেরিয়া এখনকার মতো পিসু (Flea) বা ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়াত না। ফলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন না, তখন কীভাবে এত দ্রুত রোগ ছড়াল। নতুন আবিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, সংক্রমিত পশুর মাংস বা পানি মানুষের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে।
তখন ইউরেশিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে (Eurasian Steppe) গৃহপালিত পশু ছিল যাযাবর জীবনের মূল ভরসা। কিছু কবরস্থানে পাওয়া দেহাবশেষের প্রায় ২০% মানুষ প্লেগে মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়।
গুরুত্ব ও আধুনিক প্রেক্ষাপট
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাচীন প্লেগের এই লাইনেজ এখন বিলুপ্ত হলেও Yersinia pestis এখনো পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে —আফ্রিকা, এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল, ব্রাজিল ও পেরুতে আছে। তবে বছরে বিশ্বে মাত্র ১–২ হাজার রোগী শনাক্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রাণীজ উৎসের রোগ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সতর্ক থাকা জরুরি। মাংস ভালোভাবে রান্না করা, অসুস্থ বা মৃত প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ মানুষ হাজার বছর ধরেই প্রাণীদের সঙ্গে রোগ ভাগাভাগি করে আসছে। আর পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে এই ঝুঁকি নতুনভাবে দেখা দিতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল