বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী। আর এ বছরই আমরা উদ্যাপন করছি স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল দর্শন ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতাবাদ। এ আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাও ছিল তাই। মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ যুদ্ধ করেছিল একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামের। এ আহ্বান ছিল ধর্ম বর্র্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার প্রতি। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ। বাঙালির মুক্তির মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছিল দেশের মানুষ ১৭ মার্চ। ঠিক সেদিন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটল। হেফাজতের নেতাকে সমালোচনা করে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ৮৮টি হিন্দু বাড়ি ও পাঁচটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এর আগেও ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালে ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সহিংসতার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে ভাঙচুর হয় হিন্দু বাড়ি ও মন্দির। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি হিন্দু মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন যশোরের অভয়নগর চাপাতলা গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয়। ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া, টেকনাফের বৌদ্ধমন্দির ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সেদিন ১৯টি বৌদ্ধবিহার ৪১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। আমরা যদি আরও পেছনে ফিরে দেখি ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৩৫২টি মন্দির পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে, অনেক ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয়। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হন। বঙ্গবন্ধু কি আজীবন এই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন?
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটি বাঙালি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা ধর্মের ভিত্তিতে সেখানে আশ্রয় পাননি। তারা বাস্তুচ্যুত বাঙালি হিসেবেই আশ্রয় পেয়েছিলেন। একটা সময় ছিল এদেশের মানুষ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মিলেমিশে একই পাড়ায় বসবাস করতেন। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানরা এবং মুসলমানদের উৎসবে অন্যরা শরিক হতেন। সম্প্রীতির সেই মেলবন্ধন কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দেশটি চারটি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু ইসলামের নামে আর বাংলাদেশের মানুষকে লুট করে খেতে দেওয়া হবে না।” তিনি চেয়েছিলেন সব ধর্মের সমানাধিকার এবং সবাই যেন সমানভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। ধর্মের নামে কেউ যেন কারও ওপরে জুলুম করতে না পারে। বঙ্গবন্ধু ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী অবাধে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।
অপরদিকে সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। তবে ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছিল না। পরে জেনারেল এরশাদ অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে তা যুক্ত করেছেন। সংবিধানে সব ধর্মের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থেকেই যায়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না। যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবেন। বর্তমানে সংবিধানে একদিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা যা সাংঘর্ষিক। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় চরিত্র থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গেও বৈঠক হয়। মুয়াম্মার গাদ্দাফি বঙ্গবন্ধুকে শর্ত দেন বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা করলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘এটি সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সবার দেশ। মুসলমান অমুসলমান সবার দেশ।’
ইন্দোনেশিয়ার পরে বাংলাদেশ দ্বিতীয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণ বাদশাহ ফয়সলের কাছে বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলে তিনিও বলেছিলেন, সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র’ হতে হবে। বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, দ্বিতীয় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হলেও এখানে এক কোটির বেশি অমুসলিম রয়েছে। সবাই একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, পরম করুণাময় সবারই স্রষ্টা।’ (সূত্র : বঙ্গবন্ধুর নীতিনৈতিকতা, হাসান মোরশেদ)। তবে এ দুটি দেশই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে লড়েছেন। তিনি এর সঙ্গে কখনো আপস করেননি।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “রাজনীতিতে যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা সাম্প্রদায়িক তারা হীন, নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে কোনো দিন সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আপনারা যারা এখানে মুসলমান আছেন তারা জানেন যে, খোদা যিনি আছেন তিনি রাব্বুল আলামিন। রাব্বুল মুসলিমিন নন। হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক সব মানুষ তাঁর কাছে সমান। সেজন্যই এক মুখে সোশ্যালিজম ও প্রগতির কথা এবং আরেক মুখে সাম্প্রদায়িকতা পাশাপাশি চলতে পারে না। যারা এ বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা করতে চায়, তাদের সম্পর্কে সাবধান হয়ে যাও। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তোমরা কোনো দিন সাম্প্রদায়িকতাকে পছন্দ করো নাই। তোমরা জীবনভর তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছ। তোমাদের জীবন থাকতে যেন বাংলার মাটিতে আর কেউ সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন না করতে পারে।” বঙ্গবন্ধু বরাবরই এদেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সাম্প্রদায়িক ঘটনার পেছনে নানা ষড়যন্ত্র কাজ করে, এ ব্যাপারেও তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক দেশ বিভাজনের পর প্রথম আঘাতটি আসে আমাদের ভাষার ওপর। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের মুখের ভাষা বাংলা হলেও বলা হলো উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বাঙালি এর প্রতিবাদে রক্ত ঝরিয়েছে। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদটি হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন-“আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে বাংলা ভাষা দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম। মুসলিম লীগের ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে খুব মারপিট হয়, অনেকে জখমও হয়। তারা সভা ভাঙতে পারে নাই, আমি শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা করলাম।” ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু। শেখ মুজিব বুঝেছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এদেশ সবার। প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এ দলটি ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। বাংলার শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু তা মনে রেখেছেন, এমনকি এর জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর নীতি আদর্শ থেকে একচুলও নড়েননি।
কিন্তু দেশে এখনো চলছে ধর্মের নামে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতা। তথাকথিত ধর্মের অবমাননার নামে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, লুটতরাজ এমনকি ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা তা আজ যেন মুখ থুবড়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার মূল কথা ছিল অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু একটি জায়গায় যেন আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরেই তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে দেশ জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে। মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সারা বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়। শেখ হাসিনা জনবান্ধব বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। একটি বাড়ি একটি খামার, গৃহহীনে গৃহদান, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহের ব্যবস্থা করেছেন, সারা দেশে কমিউনিটি হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, বিনা বেতনে ডিগ্রি পর্যন্ত নারী শিক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কিন্তু প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধের এক সমাজ। কারণ এখনো সমাজ থেকে মূলোৎপাটন ঘটেনি সাম্প্রদায়িক শক্তির। প্রগতিশীল মানবিক মূল্যবোধ, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এজন্য সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। নারীর অধিকারের স্বীকৃতি, পুরুষতান্ত্রিকতার অবসান, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমতার বোধ প্রভৃতি যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থেকে কাজ করতে হবে। জনগণকেও সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষা ও সচেতনতার আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমূল সংস্কার দরকার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার। আমাদের মূল শেকড় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পাঠ্যক্রমে থাকতে হবে। প্রতিটি মানুষের আত্মপরিচয় তার শেকড় থেকে উঠে আসার পরিচয়। প্রতিটি মানুষের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি জানতে হবে এ দেশটি কিসের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল। এ দেশটির জন্মের ইতিহাস জানতে হবে। এ দেশটির জন্মের পেছনে রয়েছে কত ত্যাগ-তিতিক্ষা। জানতে হবে বঙ্গবন্ধুকে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে জানলে বাংলাদেশকে জানা হবে, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। মানবিক মূল্যবোধের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে এ চেতনা যাতে জাগ্রত হয়, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় সব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মানবিক মূল্যবোধের সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার।
লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব;
সদস্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।