মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

১০ বছরের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি

১০ বছরের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তেজগাঁওয়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক স্থায়ী ক্যাম্পাস

প্রায় দুই যুগ আগে ২০০২ সালে যাত্রা করে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বখ্যাত ‘সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাংকিং-২০২২’-এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয় নিয়ে উপাচার্য ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের

 

উচ্চশিক্ষা বিস্তারে কেমন ভূমিকা রাখছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি?

- ২০০২ সালে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। প্রায় দুই যুগের বিশ্ববিদ্যালয়। যাত্রা হয়েছিল মাত্র ১০৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে। এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২ হাজার। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার দিক থেকে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছরই আমাদের শিক্ষার্থীসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাউথইস্ট দৃশ্যমান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার সম্পর্কে বলুন

- এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সুবিশাল লাইব্রেরি। সেখানে শিক্ষার্থীদের গ্রুপ স্টাডির জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। শিক্ষকদের পড়াশোনার জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী অথবা কোনো শিক্ষক কোনো নতুন বইয়ের চাহিদা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বই কেনার ব্যবস্থা করি। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বাস করে ‘আধুনিক জ্ঞানার্জনে লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই।’

 

বিভাগগুলোতে ল্যাব সুবিধা কেমন?

- প্রয়োজন রয়েছে এমন সব বিভাগের জন্যই পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবগুলো যেমন যুগোপযোগী এবং অত্যন্ত আধুনিক তেমনি সুযোগসুবিধাসংবলিত। আমাদের ফার্মেসি বিভাগেই রয়েছে ২২টি লেটেস্ট ডিজাইন ও ফরেন ডিজাইন ল্যাব। কম্পিউটার সায়েন্স ও টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টের ল্যাবগুলোও অত্যন্ত আধুনিক। আমরা একটি ‘কমিউনিটি ফার্মেসি’ স্থাপনের কাজে হাত দিয়েছি, যা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, এমনকি বাংলাদেশের কোথাও কমিউনিটি ফার্মেসি নেই। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের ১৯টি ক্লাব রয়েছে এবং প্রতিটি ক্লাবের জন্য একটি করে অফিস রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস সম্পর্কে কিছু বলুন

- ৪ বিঘা জমির ওপর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস। যেমনি দৃষ্টিনন্দন, তেমনি সুপ্রশস্ত। পাশেই হাতিরঝিল। লাইব্রেরির জানালার ধারে বসে বা ছাদে দাঁড়িয়ে ঝিলের দিকে নজর পড়লে দৃষ্টি কেড়ে নেয়, সুবাসিত পবনে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা খুব উপভোগ করে আমাদের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। অবস্থান ও অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধার দিক থেকে বিচার করলে বলা যায়, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস একটি বিশ্বমানের ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে।

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ কতটুকু মেনে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়?

- আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ বর্ণিত সব শর্তই পূরণ করেছি এবং সব নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে আসছি। আইন মোতাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ, পাঠ্যক্রম কমিটি, অর্থ কমিটি, নিয়োগ কমিটি এবং শৃঙ্খলা কমিটি নিয়মমাফিক গঠিত হয়েছে এবং সে মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এবং ৩ শতাংশ মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে আইনে। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় তা যথাযথ অনুসরণ করে আসছে। বরং মোট সংখ্যা আইনে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি।

 

ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ বৃদ্ধিতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন আপনারা?

- ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ বৃদ্ধিতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি এবং অনেকের চেয়ে আমরা এ ব্যাপারে এগিয়ে। শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট আবশ্যিক করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজাররা স্পেশালাইজ্ড কোর্সের ক্লাস নিচ্ছেন। সিলেবাস কমিটিতে ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রতিনিধি থাকছেন। অ্যালামনাই যারা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন তাদের সিলেবাস কমিটিতে রাখা হয়েছে। অনেক বড় বড় ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের স্মারক চুক্তি রয়েছে, যার ফলে আমাদের ছাত্ররা তাদের ল্যাবরেটরি ব্যবহার করতে পারছে এবং বাস্তব জ্ঞান লাভ করছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নশিপ করছে, শিক্ষকরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা কাজ করছেন।

 

চাকরির বাজারে কেমন করছে আপনাদের গ্র্যাজুয়েটরা?

- চাকরির বাজারে চাহিদা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস নামে একটি ডিপার্টমেন্ট খুলেছি। চাকরির এন্ট্রিতে যেসব অতিরিক্ত আবশ্যিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়, সর্বশেষ সেমিস্টারের পরপরই শিক্ষার্থীদের আমরা সেসব বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ফলে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা ক্রমেই চাকরির বাজারে নিজেদের অবস্থান করে নিতে সক্ষম হচ্ছে।

 

শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বা বিশেষ কোনো সুযোগসুবিধা রয়েছে কি?

- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের সম্মানিত সদস্যরা কোনো সম্মানি, ভাতা এমনকি বোর্ড-মিটিং সম্মানি গ্রহণ করেন না। সমুদয় অর্থই শিক্ষার্থী কল্যাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হয়। বিশ্ব মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম বৃত্তি ও সুবিধা চালু করা হয়েছিল, যা এখনো চালু রয়েছে। এসএসসি/এইচএসসি মেধাভিত্তিক বৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য বৃত্তি, সেমিস্টার রেজাল্ট বেইজ বৃত্তি, দরিদ্র ছাত্র বৃত্তি, মহিলা শিক্ষার্থী বৃত্তি, উপজাতিদের জন্য বৃত্তি ছাড়াও ডজনখানেক বৃত্তি চালু রয়েছে। আমরা বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা বৃত্তি দিয়ে থাকি।

 

ভর্তিচ্ছুদের উদ্দেশে কিছু বলবেন কি?

- আমরা ছাত্রদের অধ্যয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ভর্তিচ্ছুদের জ্ঞাতার্থে বলছি, অদ্যাবধি সেশনজট আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। করোনার মধ্যেও আমরা সেশনজট হতে দিইনি। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে শিক্ষক-উপদেষ্টা। অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি, জুয়া, মদ, গাঁজার আড্ডা, ছাত্রীদের ইভ টিজিং, শিক্ষার্থীদের জঙ্গিসম্পৃক্ততা ইত্যাদি থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ মুক্ত রেখেছি। কোনো কারণে শিক্ষক কোনো ক্লাস মিস করলে মেকআপ ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের যেমন বিপথে যাওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি সেশনজটের পরিবেশও নেই। আমরা দেশের আর্থসামাজিক মানদণ্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষার্থী ফি ধার্য করে আসছি, যার ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে একটি উপযুক্ত বিদ্যাপীঠ।

 

আন্তর্জাতিক ্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে বলুন

- বিশ্বখ্যাত র‌্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাংকিং-২০২২’-এ দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে। আমরা শিক্ষক নিয়োগে মানের ক্ষেত্রে কখনো ছাড় দিই না। কোয়ালিটি এডুকেশন প্রোভাইডার হিসেবে আমাদের অবস্থানকে সুউচ্চে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

 

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন

- ক্যাম্পাসে আমরা অনেক কাজ হাতে নিতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আগামী ১০ বছরের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজে হাত দিয়েছি। বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী আমরা নতুন নতুন কোর্স চালু করব। তবে নতুন ক্যাম্পাসে প্রাথমিকভাবে আমাদের প্রধান কাজ হবে বিজ্ঞান বিভাগগুলোর জন্য অত্যাধুনিক ল্যাব তৈরি করা। দ্বিতীয় কাজটি হবে ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বাসায় বসেই অনলাইনে লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়াশোনা করতে পারে। তৃতীয় কাজটি হবে উদ্যোক্তা তৈরি কর্মসূচি চালু করা বা মূল প্রোগ্রামের সঙ্গে উদ্যোক্তা সম্পর্কিত কোর্স যুক্ত করা। যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তারা গোড়া থেকেই এ কোর্সে পড়াশোনা করবে। অর্থাৎ আমরা এমনভাবে প্রোগ্রাম বা কোর্স ডিজাইন করব যাতে চাকরিদাতারা আমাদের কাছে ছুটে আসেন। অথবা আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা উদ্যোক্তা হয়ে চাকরি দিতে পারে। এটাই হবে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী দিনের লক্ষ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর