রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমরা কিন্তু ফেবারিট না

আমরা কিন্তু ফেবারিট না

আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। গতকাল অনুশীলনে বল হাতে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। উপভোগ করছেন বোলিং কোচ ওয়ালশ ও জোশী -সংগৃহীত

শেষ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, তারপর ২০১৮ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলা এবং গত মাসে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জেতায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভক্তদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। অথচ র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। সে কথাটাই গতকাল প্রেস কনফারেন্সে মনে করিয়ে দিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘আমরা কিন্তু ফেবারিট দল না। মনে রাখতে হবে, খেলতে নামছি তিন নম্বর দলের বিরুদ্ধে। কারও প্রত্যাশা, আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো, কেউ ভাবছেন সেমিফাইনাল খেলবো। জানি, অতীতে সাফল্যের কারণেই এমন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আমাদের ক্রিকেটাররাও কেউ কেউ এমন প্রত্যাশা করছেন। তবে প্রত্যাশা অনেক সময় চাপ হয়ে যায়, আবার অনেক সময় সেরা পারফম্যান্স বের করে নিয়ে আসে। আমরা সেরাটা দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত।’

বাংলাদেশ দলে এখন অনেক পারফর্মার। আয়ারল্যান্ডে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ৭৬ রান করেছেন লিটন দাস। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচের ভারতের বিরুদ্ধে হেরে গেলেও সে ম্যাচে ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দিনাজপুরের এই তারকা ওপেনার। তারপরও আজ একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেন না তামিমের সঙ্গী হিসেবে দুরন্ত ফর্মে আছেন সৌম্য সরকার। তাই পারফর্মার দেখে নয়, পজিশন বিচারে একাদশ সাজাবে বাংলাদেশ। মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের প্রাধান্য থাকবে নির্দিষ্ট পজিশনে কে সেরা? যেমন রিয়াদ (মাহমুদুল্লাহ) বোলিং করতে পারবে না সম্ভবত। তাই সাত নম্বরে যে সুযোগ পাবে স্পিনার দেখেই নিতে হবে।’ তবে বাংলাদেশের বড় স্বস্তির খবর বোধহয় তামিম ও সাইফউদ্দিনের সুস্থ হয়ে ওঠা। ইনজুরি সম্পর্কে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘তামিম ব্যাট করছে। সাইফউদ্দিনও বোলিং করছে। ম্যাচের আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এখানকার ক্রিকেটে কেউ সব সময় শতভাগ ফিট হয়ে খেলতে পারবে না। একটু না একটু ইনজুরি নিয়েই খেলতে হয়।’ তাই আজ তামিম ও সাইফউদ্দিন যে খেলছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইংলিশ কন্ডিশনে এশিয়ার দলগুলোর যাচ্ছেতাই অবস্থা! পাকিস্তান তাদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ১০৪ রানেই গুটিয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা গতকাল অলআউট হয়েছে মাত্র ১৩৫ রানে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাটিং করছিল আফগানিস্তান। তারাও ব্যাটিংয়ে ধুঁকছিল। সেখানে বিশ্বকাপ শুরুর আগে কত কথাই না শোনা যাচ্ছিল, এবারের আসরে রানের বন্যা বয়ে যাবে! ইনিংস প্রতি তিনশর উপরে রান হবে? তাহলে কেন এই অবস্থা?

মাশরাফির সপ্রতিভ উত্তর, ‘দলগুলো হয়তো প্রথম ম্যাচে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। তাই এমন হচ্ছে। দেখা যাবে দুই একটা ম্যাচ খেললেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

পাশাপাশি মাশরাফি আরেকটি ইঙ্গিতও দিলেন, ‘দেখেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আমরা আয়ারল্যান্ডে খেলেছি। তাদের দলে  পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু বোলিং আক্রমণভাগে একই আছে। তাই আমাদের ব্যাটসম্যানরা পেরেছে, পাকিস্তানের ওরা পারেনি।’

মাশরাফি কথায় এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ওরা পারেনি বলে যে বাংলাদেশ পারবে না এমন নয়! এটাও তো সত্য যে, বাংলাদেশ এখন এশিয়ার দুই নম্বর দল। ভারতের পরই অবস্থান। তাই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।

নিজ দলের ওপর ভীষণ আস্থা মাশরাফির। নিজের শক্তির জায়গাটাও খুব ভালো করেই বোঝেন তিনি। তাই আজ প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। ব্যাটিং পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘যে কয়টা ম্যাচ এ পর্যন্ত হয়েছে, বড় স্কোর না হওয়ার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে ব্যাটসম্যানরা মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন এখানে বড় স্কোর করতে হবে। তাই শুরুতেই তারা বড় শট খেলতে যাচ্ছেন। অযথা ঝুঁকি নিতে গিয়ে আউট হয়ে যাচ্ছেন। তাই দল বিপদে পড়ছে। আমাদের পরিকল্পনা থাকবে উইকেট ধরে রেখে খেলা। যে সেট হয়ে যাবে তাকে বড় ইনিংস খেলতে হবে। আর উইকেট হাতে থাকলে বড় ইনিংস করা সম্ভব হবে।’

বোলারদের সম্পর্কে বলেন, ‘আতঙ্ক তৈরি করার মতো বোলার আমাদের নেই এটা ঠিক। কিন্তু আমরা তো রানে আটকে রেখে প্রতিপক্ষের যন্ত্রণা তৈরি করতে পারি। আর রান আটকে গেলে ওরা ঝুঁকি নেবে শট খেলতে। তখন উইকেটও পড়বে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে মাশরাফির বক্তব্য, ‘ওরা খুবই ভয়ঙ্কর দল। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে বলে অন্য কিছু ভাবার উপায় নেই। কেন না সবাই জানে এবার ইংল্যান্ড ফেবারিট দল। হয়তো সেভাবেই ওদের মাইন্ডসেট ছিল। পাশাপাশি আজ ওরা আমাদের বিরুদ্ধে ফেবারিট হয়ে নামবে। সেজন্য যদি এটা ভাবে যে, আমাদের বিরুদ্ধে তারা পুরো পয়েন্ট পেয়েই গেছে সেটা হবে ভুল।’

তবে এটা তো ঠিক যে, বিশ্বকাপ যদি একটা পর্বতমালা হয়, বাংলাদেশ দল সেখানে এক তরুণ ‘পর্বতারোহী’! লক্ষ্য, উঠতে হবে শিরোপা নামক স্বপ্ন শৃঙ্গের চূড়ায়। প্রস্তুতি দুর্দান্ত। আর বেইসক্যাম্পে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ দলের যাত্রাটা শুরু হচ্ছে আজই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর