সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নিয়ে যত কথা

সন্দেহ নেই অনেক যোগ্য ক্রীড়াবিদই এ পুরস্কার পেয়েছেন। আবার অযোগ্য ও বিতর্কিতদের প্রাধান্য দিয়ে এ বিরল সম্মান এখন হাসি তামাশায় পরিণত হয়েছে।

মনোয়ার হক

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নিয়ে যত কথা

১১ মে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হবে। বেশ কয়েক বছরে জমে থাকা পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে ক্রীড়াবিদদের হাতে। একজন খেলোয়াড়ের বড় স্বীকৃতি জাতীয় পুরস্কারই। দীর্ঘদিন পর ক্রীড়াঙ্গনের এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। যা সত্যিই আনন্দের। জাতীয় পুরস্কার প্রকৃত যোগ্য ক্রীড়বিদদের হাতে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। ট্র্যাজেডি হচ্ছে এ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা এসেছিল তাঁরই মুখ থেকে। ১৯৭৩ সালেই এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। বলেছিলেন, কোনো স্বজনপ্রীতি বা রাজনীতি পরিচয়ে নয়, দেশের হয়ে অবদান রাখার জন্যই এ স্বীকৃতি। প্রশ্ন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু যা চেয়েছিলেন তা কি হচ্ছে?

শুরু থেকেই পুরস্কার ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখন তো তা ঝড়ে পরিণত হয়েছে। সন্দেহ নেই অনেক যোগ্য ক্রীড়াবিদই এ পুরস্কার পেয়েছেন। আবার অযোগ্য ও বিতর্কিতদের প্রাধান্য দিয়ে এ বিরল সম্মান এখন হাসি তামাশায় পরিণত হয়েছে। যাদের জায়গা অধিকাংশ রিজার্ভ বেঞ্চে ছিল তারাও অনায়াসে পেয়ে যাচ্ছেন দেশ সেরা এ ক্রীড়া পদক। অথচ মাঠ কাঁপানো অনেক খেলোয়াড়ই এ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

আলী ইমাম, ওয়াজেদ গাজী ও ছোট নাজির। ফুটবলে তাদের অবদানের কথা জাতি কি কখনো ভুলতে পারবে? তবু তাঁরা অবহেলিত কিংবা পরিষ্কার করে বললে নোংরা পলিটিক্সের শিকার। আলী ইমাম আবাহনী, ওয়ান্ডারার্স বা ইস্টএন্ডের তারকা ফুটবলারই ছিলেন না, দেশের অন্যতম সফল কোচ। আবাহনী ও মোহামেডান সেরা এ দু দলই ৮০ দশকে চ্যাম্পিয়ন ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন রানার্সআপ হয় তারই প্রশিক্ষণে। অসংখ্য তারকা ফুটবলার তৈরি করেছেন। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম রূপকার। অনেক আগেই তো তাঁর পুরস্কার পাওয়ার কথা। ১৯৮৯ সালে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। তারপরও মিলছে না স্বীকৃতি।

ওয়াজেদ গাজী ছিলেন কলকাতা মোহামেডানের  সোনালি দিনের ফুটবলার। ঢাকায় এসে বিজেএমসি ও মোহামেডানের হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফুটবলের মায়া ছাড়তে পারেননি। ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ পাঁচ ক্লাবের সফল কোচ। অসংখ্য খেলোয়াড় তৈরি করেছেন। ফুটবলের গুরুর স্বীকৃতি পেয়েও জাতীয় পুরস্কার পাননি। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাংলাদেশের যদি পাঁচ সেরা ডিফেন্ডারের নাম বলা হয় তাহলে ছোট নাজির থাকবেন শীর্ষে। বিজেএমসি ও জাতীয় দলে খেলা এ ডিফেন্ডারকে চীনের প্রাচীর বলা হতো। ইনজুরিতে পড়ে তার রাজকীয় ক্যারিয়ারে সমাপ্তি ঘটে। নাজির কি জাতীয় পুরস্কারে জন্য যোগ্য নন? নীতিনির্ধারকরা বলেন, এখানে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অপেক্ষায় থাকতে হবে?

প্রশ্ন হচ্ছে এ অপেক্ষার শেষ কোথায়? অতীত বা এবার যারা পুরস্কারের জন্য বাছাই হয়েছেন তাদের চেয়ে এ তিন ফুটবলারের যোগ্যতা কী কম? ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সারওয়ার টিপু নিজেও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তাই আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, আমি যদি পাই তাঁরা পাবেন না কেন? কেন পাচ্ছেন না তা টিপুর কাছেও রহস্য ঠেকছে। বললেন, পুরস্কার নিয়ে নাকি অনেক আগেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। হয়তো বা এ সিন্ডিকেটকে খুশি করতে পারছে না বলেই পুরস্কার মিলছে না।

সর্বশেষ খবর