ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৯ বছরের ফুটবলার কিউবা মিচেল কিছুদিন আগে যোগ দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসে। দেশসেরা ক্লাবে যোগ দিয়েই তিনি উপহার দিয়েছেন দারুণ এক জয়। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে কিংস সিরিয়ান ক্লাব আল কারামাহকে হারিয়ে নিশ্চিত করেছে গ্রুপ পর্ব। জয় নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন কিউবা। বাংলাদেশি হয়ে ওঠার গল্প, ফুটবল, পরিবার এবং ক্লাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন - রাশেদুর রহমান
প্রথমেই বলুন, আপনি কীভাবে বাংলাদেশি হলেন। তার পেছনের গল্পটা। কে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং কার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল?
অবশ্যই প্রথম যে জিনিসটা আমাকে আকর্ষণ করেছিল, সেটা হলো জাতীয় দলের জার্সিতে হামজার খেলা। এটা দেখে, আমি মনে করি ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে যারা বংশগতভাবে বাংলাদেশের, তাদের অনেকেই হামজার মতো করতে চেয়েছে। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, হ্যাঁ, এটা আমি করতে চাই। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনেক গ্রুপে আমাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তার পর ফেডারেশন থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে। আমি আর ভিন্ন কিছু চিন্তা করিনি। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি। এভাবেই বাংলাদেশি হয়ে উঠেছি।
ইংল্যান্ডে আপনি কীভাবে একজন ফুটবলার হয়ে উঠলেন। কে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
আমার পরিবারে সবসময় ফুটবলের চর্চা ছিল। আমার বাবা ফুটবল খেলতেন, উনি লিভারপুলের একজন বড় ভক্ত এবং আমার পরিবারেও সবাই তাই। তাই ওই পরিবেশে বড় হওয়া। যখন আমি ৫ বা ৬ বছর বয়সী তখন একটি স্থানীয় দলে যোগ দিই। এরপর থেকে ফুটবলই ছিল সবকিছু। স্কুল থেকে ফিরে এসে ফুটবল খেলা, ট্রেনিং না থাকলে পার্কে যাওয়া। এটা একটা রুটিন ছিল। আমি ফুটবলকে ভালোবাসতাম এবং সবসময় সেটাই করতে চেয়েছি।
বাংলাদেশের ফুটবলের খোঁজ রেখেছেন কী? দলের খেলা দেখেছেন?
হ্যাঁ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকেই আমি দলের খেলা দেখা শুরু করি। আমি সম্ভবত অনূর্ধ্ব-১৮ কোয়ালিফায়ারের একটা খেলা দেখেছিলাম। আমি সবসময় খেলা দেখি, যাদের সঙ্গে খেলব এবং যারা আগামীতে আসছে, তাদেরও। এমনকি যখন আমি কিংসে যোগ দিইনি তখনো আমি বিপিএলের খেলা দেখার চেষ্টা করতাম। আমি যতটা সম্ভব বাংলাদেশি ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ ফরোয়ার্ড পজিশনে বেশ পিছিয়ে আছে। আপনি আর হামজা কি আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করতে পারবেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের মধ্যে আমিই সম্ভবত সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, হামজা এবং আমি। এটা খুবই ভালো একটা মিডফিল্ড। আশা করি, যদি আমরা নিজেরা গোল করতে না পারি, তাহলে অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারব। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ওদের সঙ্গে খেলার জন্য। আশা করি আমরা গোলের অভাব দূর করতে পারব।
বসুন্ধরা কিংসে কীভাবে এলেন? এ ক্ষেত্রে কী বিষয় আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
হ্যাঁ, ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান আমাকে প্রথম কিংসে খেলার প্রস্তাব দেন। তখনই তিনি যে প্রকল্পের কথা বলেছিলেন, সেটাতে আমি ছিলাম একজন তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে, যাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলা হবে। তারা আমাকে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চায়। এ ধরনের প্রজেক্ট অন্য কোনো ক্লাব দেয়নি, তাই এটিই আমাকে রাজি করিয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারব। আমি এখানে এসে সত্যিই অবাক হয়েছি। এখানকার অনুশীলন করার সুবিধা অনেক ভালো। কোচিং স্টাফও খুবই ভালো। এখানে অনেক ভালোমানের ফুটবলার আছেন। বিশেষ করে তারিক কাজীর কথা বলব। তিনি ফিনল্যান্ড থেকে এসেছেন। আরও অনেকেই আছেন।
বসুন্ধরা কিংস পর পর পাঁচবার লিগ জিতেছে। আপনি কি মনে করেন, আপনি দলে এমন কিছু যোগ করতে পারবেন যা দলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে নেবে?
হ্যাঁ, আমাদের প্রধান লক্ষ্য অবশ্যই লিগ জেতা। যদি না জিতি, তবে সেটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা হবে। তবে আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে ভালো করা। আমি মনে করি সেখানেই আমি নিজের প্রতিভা দেখাতে পারব এবং দলকে এশিয়ান পর্যায়ে এগিয়ে নিতে পারব।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলে কী আপনি জাতীয় দলে আরও ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?
নিশ্চয়ই। আমি বসুন্ধরা কিংসে যোগ দেওয়ার সময়ই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। জাতীয় দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই এই ক্লাবে খেলেন। আমরা একসঙ্গে খেলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা আরও বাড়িয়ে নিতে পারব। ম্যাচে একে-অপরকে বেশি সহযোগিতা করতে পারব। এটা আমাদের খেলায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন। আপনার ভাইবোন কয়জন?
আমার মা সিলেটি। সেখান থেকেই আমি বাংলাদেশি বংশোদ্ভব। মা নানাবাড়ি সিলেটে থাকতেন। আমার বাবা জ্যামাইকান ও ইংলিশ, উনার বাবা-মাও জ্যামাইকান ছিলেন এবং পরবর্তীতে ইউকে এসেছেন। আমার এক ছোট বোন আছে, কিন্তু সে ফুটবল পছন্দ করে না। আমার বাবা ফুটবল খেলতেন এবং আমাকে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করেছেন। তিনিও আমার বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। এটা এমন না যে আমার বিভিন্ন জাতিগত পরিচয়ের মধ্যে দ্বিধা ছিল। আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাই তা মেনে নিয়েছে।
জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?
আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলা। আমি বিশ্বাস করি, আমরা পরবর্তী কয়েক বছরে কিংবা তার পরের সময়েও বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করতে পারি। এটা বাংলাদেশের জন্য, সমর্থকদের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন হবে। এমনকি যারা ফুটবল পছন্দ করে না, তাদের জন্যও। ক্লাবের ক্ষেত্রে, প্রথম লক্ষ্য লিগ জয় করা। তার পর আরও বড় এশিয়ান প্রতিযোগিতায় ভালো করা। এখন এই লক্ষ্যগুলোর দিকেই আমার মনোযোগ।