এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছেন লিটনরা। টি-২০ এশিয়া কাপের সুপার ফোর আজ শুরু। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের আগে কি লিটন দাস আলাদা করে ধন্যবাদ জানাবেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আশালাঙ্কাকে? ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট্ট একটি টেক্সট করবেন? হয়তো করেছেনও। কিংবা করেননি। টাইগার অধিনায়ক ধন্যবাদ জানান, আর না জানান, বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালোবাসা ও সমর্থন পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছেন কুশল মেন্ডিসসহ শ্রীলঙ্কা। আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। ম্যাচের ফল অন্য ৮-১০টি ম্যাচের মতোই। কিন্তু লিটন বাহিনীর জন্য ছিল হাজার কোটি টাকারও বেশি! এমন একটি মধুময় জয়ের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা। শুধু অপেক্ষা নয়, দোয়াও করেছেন ছয়বারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার জন্য। গ্রুপ ‘বি’র শেষ ম্যাচে আশালাঙ্কা বাহিনী জিতেছে। হেসেছেন লিটন, তানজিদ তামিম, মুস্তাফিজরা। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের হারে বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় দল হিসেবে সুপার ফোরে খেলছে। সুপার ফোরে খেলার সুযোগ পাওয়ার উৎসব করার আগেই লিটনরা আজ ব্যাট ও বলের লড়াইয়ে নেমে পড়ছেন। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। ম্যাচটি একদিকে হতে পারে ধন্যবাদ, অথবা কৃতজ্ঞতা জানানোর। বিপরীতে আবার প্রতিশোধেরও। গ্রুপ পর্বে দ্বীপরাষ্ট্রের কাছে ৩২ বল আগে ৬ উইকেটে হেরেছিলেন লিটনরা। ওই হারের প্রতিশোধ নিয়ে লিটনরা এবার স্বপ্ন দেখছেন প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের।
ডান হাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ রয়েছেন দারুণ ছন্দে। ৭৮ ম্যাচে ৯৪ উইকেট নিয়ে এশিয়া কাপে খেলতে আসেন ডান হাতি ফাস্ট বোলার। আজ খেলবেন টি-২০ ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মাইলফলকের হাতছানি নিয়ে। ২ উইকেট পেলেই সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মাইলফলক গড়বেন তাসকিন। তার উইকেট সংখ্যা এখন ৮০ ম্যাচে ৯৮টি। সাকিবের উইকেট ১২৯ মাচে ১৪৯টি এবং মুস্তাফিজের ১১৬ ম্যাচে ১৪৬টি। মুস্তাফিজেরও রয়েছে বাংলাদেশের বোলার হিসেবে ১৫০ উইকেট নেওয়ার হাতছানি।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পরস্পরের বিপক্ষে খেলছে ১৯৮৬ সালের দ্বিতীয় এশিয়া কাপ থেকে। গত ৩৯ বছরে দুই দল টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ খেলেছে। পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি থেকে দুই দেশ পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। মাঠ ও মাঠের বাইরের লড়াইয়ে ক্রিকেটার, ক্রিকেটপ্রেমীরা পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে খেলা উপভোগ করেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেই ১৮ সেপ্টেম্বর টাইগার ক্রিকেটার ও ক্রিকেটপ্রেমীরা মনেপ্রাণে শ্রীলঙ্কার জয় চেয়েছেন। দুই দল এখন পর্যন্ত পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে টি-২০ ম্যাচ খেলেছে ২১টি। বাংলাদেশের আট জয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার ১৩টি। যার ছয়টিই সর্বশেষ ১০ ম্যাচে। টাইগাররা শেষ জিতেছে চারটি। এর মধ্যে একটি ছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জয়। অবশ্য চলতি আসরে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আশালাঙ্কা বাহিনীর কাছে পাত্তাই পায়নি টাইগাররা। ৩৯ বল আগে ৬ উইকেটে হেরেছিল।
আজ নতুন ম্যাচ। নতুন টার্গেট। নতুন স্বপ্ন। সুপার ফোরে উঠে লিটন বাহিনীও ফুরফুরে মেজাজে। গতকাল দুবাইয়ে ফ্লাড লাইটের আলোয় অনুশীলনে বেশ ফুরফুরে ছিলেন লিটন, তানজিদ তামিম, মুস্তাফিজ, তাসকিন, নাসুমরা। অবশ্য সবার চোখে মুখেই ছিল দৃঢ়তা। আসরে লিটন বাহিনী দুটি ম্যাচ জিতলেও ধারাবাহিক ছিলেন না ব্যাটাররা। বিশেষ করে নিয়মিত ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন জুটি হংকং, শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বড় স্কোর করতে পারেননি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্ট ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনে। পারভেজের বদলে খেলান সাইফ হাসানকে। দুজনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬.৪ ওভারে ৬৩ রানের জুটি গড়েন। ওপেন জুটির ওপর এখন ভীষণ আস্থাশীল টাইগার অধিনায়ক লিটন। ম্যাচে নাসুম প্রথমবার খেলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ম্যাচ জেতান। ছন্দ ফিরে পেয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। আজ পঞ্চম বোলার খেলানো জরুরি। আফগানিস্তান ম্যাচে পঞ্চম বোলার না থাকার খেসারত গুনতে হয়েছিল। পঞ্চম বোলারের কোটা পূরণ করতে বোলিং করেছিলেন শামীম পাটোয়ারী ও সাইফ। দুজনে মিলে রান দেন ৫৫। সাইফ ৩ ওভারে রান দেন ৪ ছক্কা ও এক চারে ৩৯। শামীম এক ওভারে এক চার ও এক ছক্কায় ১৬ রান দেন। তাসকিন ও মুস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৮ রানের খরচে নেন ৩ উইকেট। তাসকিন ৩৪ রানের খরচে নেন ২ উইকেট। ম্যাচসেরা নাসুমের স্পেল ছিল ৪-১-১১-২। রিশাদের স্পেল ছিল ৪-০-১৮-২।