বিসিবির নির্বাচন ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই রচিত হচ্ছে নতুন নতুন স্ক্রিপ্ট। এতে দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি। বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী সাবেক অধিনায়ক ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। গতকাল ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে জেলা ও বিভাগের ক্রীড়া সংগঠকদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে তামিম সরাসরি বিসিবির বর্তমান সভাপতির বিপক্ষে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ করেন। সাবেক অধিনায়ক তামিম বলেন, ‘বুলবুল ভাই বলেছিলেন, নির্বাচন কেমন হয় এটা নিয়ে তার ধারণাই নেই। তিনি কিছুই জানেন না। তার ধারণা একদম শূন্য। তিনি যদি কিছু না জেনে থাকেন, আপনারা একটি চিঠি দেখেছেন না? তিনি সাইন করে বলেছেন আগের কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়া হবে। শুধু অ্যাডহক কমিটির থেকে নেওয়া হবে। নতুন করে আমরা ফর্ম পাঠাচ্ছি। যে চিঠিতে তিনি সাইন করেছেন। আগের সব চিঠি প্রধান নির্বাহীর সাইন করা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন হওয়ার পর তিনি কোথাও সাইন করতে পারবেন না। এ চিঠিতে সাইন করে তিনি কোন ক্ষমতাবলে ডিসিদের পাঠিয়েছেন।’
বিসিবির নির্বাচন নিয়ে তামিম দেখা করেছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন তামিম, ‘আমাদের স্পোর্টস (ক্রীড়া) অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তখন তাকে আমি একটি কথাই বলেছিলাম- ভাইয়া, আমি আপনার কাছ থেকে কিছুই চাই না। আমি শুধু একটি বিষয়ই চাই, আর তা হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এর বাইরে আমি তার কাছে কোনো দাবি করিনি, কিছুই চাইনি। কিন্তু তারপর থেকে আমরা যা দেখতে শুরু করেছি কিংবা জেলা ও বিভাগে যা ঘটছে, এমনকি ক্লাব পর্যায়েও যা চলছে সেগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে না।’
বিসিবির বর্তমান সভাপতি গত শনিবার পরিচালকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এক নির্দেশনা দেন। তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ঘোষিত অ্যাডহক কমিটি কাউন্সিলর না দেওয়ায় আগেরগুলো বাতিল করা হয়েছে। কোন ক্ষমতাবলে বিসিবি সভাপতি করেছেন, এটা জানতে চেয়েছেন তামিমসহ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকরা। এর আগে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো থেকে কাউন্সিলরদের নাম বিসিবিতে পাঠানো হয়েছিল। এটা বাতিল করে বিসিবি সভাপতি নিজে স্বাক্ষর করে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমনটা করার কোনো ক্ষমতা নেই তার। গঠনতন্ত্রে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, ১২.৭ ধারা অনুযায়ী পুনরায় কাউন্সিলর পাঠানোর সুযোগ নেই।
বিসিবির বর্তমান সভাপতির ক্ষমতার অপপ্রয়োগের ফলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ক্রিকেট সংগঠকরা। পরিস্থিতি যখন দিন দিন জটিল হচ্ছে, তখন বিসিবির নির্বাচন কমিশন গতকাল চূড়ান্তভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত নতুন তফসিল অনুযায়ী বিসিবির নির্বাচন ৬ অক্টোবর। নির্বাচনের আগের তারিখ ছিল ৪ অক্টোবর। নির্বাচন নিয়ে এমন নাটক জাতীয় নির্বাচনকেও হার মানাচ্ছে। বিসিবির নির্বাচন ঘিরে ক্লাব ও ক্রীড়া সংগঠকরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিসিবি। কমিশন বিসিবির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিলে প্রকাশ করা হয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত আপত্তি গ্রহণ, ২৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত আপত্তির ওপর শুনানি এবং ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ, ২৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৯ সেপ্টেম্বর যাচাই-বাছাই ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা করা হবে। আপিল ও শুনানির তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও বৈধ প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ অক্টোবর। ৬ অক্টোবর পোস্টাল ও ই-ব্যালট বিতরণের তারিখ। ওই দিনে স্থানীয় একটি পাঁচতারা হোটেলে ১৭১ কাউন্সিলর ২৩ পরিচালক নির্বাচিত করবেন সরাসরি ভোটে। একই দিনে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের কাউন্সিলররা ক্যাটাগরি-১-এ ১০ পরিচালক, ক্লাব বা ক্যাটাগরি-২-এ ১২ পরিচালক এবং ক্যাটাগরি-৩-এ নির্বাচন করবেন এক পরিচালক। দুই পরিচালক সরাসরি মনোনয়ন দেবে এনএসসি।