বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে যে শঙ্কার কালো মেঘ ছেঁয়েছিল, ৪ জানুয়ারি কলম্বোয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভা শেষে সেটা দূর হয়ে যায়। সদস্যরা আগের অবস্থানে স্থির থেকে বাংলাদেশেই এশিয়া কাপ আয়োজনের বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করেন। এমন সিদ্ধান্তে হাফ ছেড়ে বাঁচেন এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু সত্যি কি শঙ্কার কালো মেঘ দূরীভূত হয়েছে এ দেশের ক্রিকেট আকাশ থেকে?
এসিসির সভায় এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেনি পাকিস্তান। আয়োজক হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ সফরে না আসার বিষয়ে কোনো কথা বলেনি শ্রীলঙ্কা। সভা শেষ হয়েছে দিন তিনেক আগে। কিন্তু সময় পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে এখন ধীরে ধীরে গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সংকটগুলো।
এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আসার কথা শ্রীলঙ্কার। এসিসির সভাকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও আসন্ন সিরিজ নিয়ে কথা বলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কিন্তু সফরের বিষয়ে কোনো কিছুই পরিষ্কার করে বলেনি দ্বীপরাষ্ট্রটির ক্রিকেট বোর্ড। শুধু জানিয়েছে, তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। গত দুই মাসের সহিংস আন্দোলন ও অবরোধে বিপর্যস্ত জনজীবন। নিরাপত্তাহীনতার কথা মাথায় রেখেই সফরের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি শ্রীলঙ্কা। ২০০৯ সালে লাহোরে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়েছিল শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উপর। যাতে নিহত হয়েছিল ৮ জন। আহত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। সিরিজ অসমাপ্ত রেখেই পাকিস্তান ছেড়েছিল শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সফরে আসার বিষয়টি চূড়ান্ত করছে না শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। সে দেশের বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিশান্থ রানাতুঙ্গা এ বিষয়ে বলেন, 'আমরা সবার আগে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয় দেখব। সফরের বিষয়ে আমরা আমাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।' বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, 'আমরা যোগাযোগ রাখছি। তারা আসা না আসার বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি।' শোনা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার সফর চূড়ান্ত হবে আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে।
এসিসির সভার আগে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নিবে না পাকিস্তান। সভায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেনি না খেলার বিষয়ে। তবে সভার আগে পিসিবি জানিয়েছিল, নিরাপত্তার বিষয়ে তারা কথা বলবে তাদের সরকারের সঙ্গে। তারপর সিদ্ধান্ত নিবে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ফুঁসে উঠে। এসব বিবেচনা করে পিসিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, 'পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিসিবির উচিত নয় এমন পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া। কাদের মোল্লার ফাঁসিকে ঘিরে পাকিস্তানবিরোধী একটি প্রতিবাদও হয়েছে বাংলাদেশে। এসব চিন্তা করে নিরাপত্তার কথা অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত।' পিসিবি নিরাপত্তার কথা নিয়ে ভাবলেও বিসিবি আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছে না। এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে কোনো চিন্তাই করছে না। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও সেটাই জানিয়েছেন, 'এশিয়া কাপ হবে এটাই আমরা জানি। আমরা অন্য কোনো কিছু নিয়ে ভাবছি না।' পাকিস্তান আসবে কিনা, এ প্রসঙ্গে সিইও বলেন, 'আমরা এমন কিছু জানিনা। আমাদের কোনো কিছু জানানোও হয়নি।' এসিসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক বলেন, 'এসিসির সভা চলাকালীন কোনো কিছুই বলেনি পাকিস্তান। এছাড়া এশিয়া কাপ নির্ধারিত সময়েই হবে।'
রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তান ও ভারত বেশ কয়েকবার অংশ নেয়নি এশিয়া কাপে। দেশ দুটি অংশ না নিলেও অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়া কাপ। সুতরাং এবার পাঁচ জাতির টুর্নামেন্ট চার জাতির হতেও পারে! তবে এমনটা চাইছে না এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এশিয়া কাপ মাঠে গড়াবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। ফাইনাল ৮ মার্চ।