ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৩টা। বাড়ির বাইরে শব্দ যেন ক্রমশ বাড়ছে। ১৪ বছরের ছেলেটা প্রথমে পাত্তা দেয়নি। কিন্ত ক্রমেই শব্দ বেড়ে যাওয়ায় সে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে পায়, বাড়ির কাছেই পার্ক করা গাড়িতে জোর করে উঠতে চাইছে এক ব্যক্তি। তখনই ভয় পেয়ে ছোট ছেলেটা অ্যালার্ম বাজায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে আবিষ্কার করে, সেই অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি আর কেউ নন, অস্ট্রেলিয়া কাঁপানো থর্পেডো সাঁতারু ইয়ান থর্প।
এরপর পুলিশ সিডনির পানানিয়া স্ট্রিট থেকে 'অপ্রকৃতিস্থ' অলিম্পিয়ান ইয়ান থর্পকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে একটি রিহ্যাবে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার ভোর রাতের ঘটনা এটি।
রিহ্যাবে ভর্তি করার কথা থর্পের মা-ও স্বীকার করেছেন। গত সপ্তাহেই থর্পের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মদ্যপান করে অসংলগ্ন ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।
সোমবার গভীর রাতে যেখানে ওই ঘটনা ঘটে, তার খুব কাছে থর্পের বাড়ি। সে সময়ে তার সঙ্গে এক বন্ধুও ছিলেন। কাঁধের আঘাতের অস্ত্রোপচারের জন্য গত সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল থর্পকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি পরিবারের সঙ্গে বাস করছিলেন।
পুলিশের মুখপাত্র বলেন, থর্প তখন ঘোরের মধ্যে ছিলেন। ওর বিরুদ্ধে কোনও সরকারি অভিযোগ না থাকায় প্রথমে হাসপাতালে ও পরে একটি রিহ্যাবে ভর্তি করানো হয়।
অলিম্পিকে সোনাজয়ী অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি এই সাঁতারুকে এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দু'বার রিহ্যাবে নিয়ে যেতে হলো। অনেক দিন সুইজারল্যান্ডে কাটিয়ে ফিরে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়।
এর আগেরবারও মদ্যপানের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল থর্পের পরিবারের পক্ষ থেকে। এ বারও তাই। সোমবার থর্পের ম্যানেজারের সাফা গাইলেন, কাঁধের চোটের জন্য ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়েছেন থর্প। এর জন্য তার চিকিৎসাও চলছে। ব্যথা এবং অবসাদ কাটানোর ওষুধ চলছে তার। উনি তখন মদ পান করেননি। রাস্তায় ওই গাড়ি দেখে মনে করেছিলেন, ওটা ওর বন্ধুর গাড়ি। তাই ওইভাবে জোর করে উঠতে গিয়েছিলেন।
২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার পর থেকেই ক্রমশ হতাশা চেপে ধরছে অলিম্পিতে পাঁচ সোনার মালিককে। পরে ভেবেছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের জন্য হয়তো জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন। কিন্ত্ত কাঁধের চোট তার সেই স্বপ্নেও পানি ঢেলে দেয়। এরপর থেকে অতিরিক্ত মদ্যপানে হতাশা কাটাতে চাইছেন, এমন খবর অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল।
২০১২ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লিখেছিলেন বেড়ে চলা অবসাদ, আর তা এড়াতে মদ্যপানে আশ্রয়ের কথা।