দিন তিনেক আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে গেছে শেন জার্গেনসেনের। ক্রিকেট বোর্ড পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়েছে তাকে। বোলিং ও হেড কোচ হিসেবে তিন বছর টাইগারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সুখকর অনেক স্মৃতি রয়েছে এই অস্ট্রেলিয়ানের। কাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সবার সঙ্গে দেখা করে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করার পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে মনের ঝাঁপি খুলে বলেছেন নানান কথা। বলেছেন, এ দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়েও এবং বিদায় বলেছেন ক্রিকেটপ্রেমী জাতিকে।
২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে নাম লিখিয়েছিলেন জার্গেনসন। হেড কোচ দায়িত্ব নেন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তার কোচিংয়ে বাংলাদেশের সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ব্যর্থতাও। বিশেষ করে ঘরের মাঠে গত চার মাসে তার কোচিংয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে টাইগাররা। দলের ব্যর্থতার দায়ভার তার ওপর পড়েছে। ফলে অনেকেই তার কোচিংয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেন। বোর্ড কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই গত ২৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেন জার্গেনসন। ৫ মে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বিসিবি। গত তিন বছর ধরে বোলিং কোচ ও হেড কোচ হিসেবে থাকার সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক মধুরই ছিল। কাল মিরপুরে এসে বললেন এটাই সম্ভবত শেষবার বাংলাদেশে মাঠে আসা, 'আমি আজ (কাল) এসেছিলাম অনেককে বিদায় জানাতে। অনেককে বিদায় জানানোর ছিল। সম্ভবত এটাই আমার শেষ মাঠে আসা।' সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছেন ঠিকই। কিন্তু মনের গহিনে রয়ে যাবে এদেশের ক্রিকেট, কাল সেটা জানাতে ভুললেন না, 'আমার সারা জীবন এদেশের ক্রিকেটার ও ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা মনে থাকবে। এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অসাধারণ। তারা সব সময় দলকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। মুশফিক, তামিম, মাশরাফিরা সব সময়ই দেশের জন্য সেরাটা ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সবাইকে মনে থাকবে।'
তিন বছর ধরে এদেশে থাকছেন। বহু জয়-পরাজয়ের সাথী হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি জয়ের কথা আজীবন মনে থাকবে জানিয়েছে বলেছেন, 'দুটি জয়ের কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। একটি হচ্ছে- ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয় এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়।' বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে জার্গেনসন বলেন, 'বর্তমান দলটি তরুণ। পাঁচ বছর পর দলটির ভবিষ্যৎ ভালো হবে মনে করি। তখন ক্রিকেটারদের বয়স হবে ২৭-৩২।'
জার্গেনসনের যেমন মন জুড়ে থাকছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, তেমনি মাশরাফি, আল-আমিনদের মন জুড়েও থাকছেন জার্গেনসন। কাল বেশ অনেকটা সময় কোচের সঙ্গে কাটান আল-আমিন। কোচ তাকে খেলার দিকে মনোনিবেশ করতে বলেছেন জানান আল-আমিন, 'বাইরের দিকে মনোনিবেশ না করে খেলার দিকে মনোযোগী হতে বলেছেন। তার আচরণ ছিল বন্ধুর মতো।' দেশসেরা পেসার মাশরাফি বলেছেন সবসময়ই ক্রিকেটারদের পাশে ছিলেন জার্গেনসন, 'ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। তিনি অনেক পরিশ্রম করতেন। দলের সাফল্য পেতে চাইতেন সব সময়। আমি যখন ইনজুরিতে ছিলাম, তখন তিনি আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।'