আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাঁধে থাকা বিশাল বোঝাটা কিছুটা হালকা করে দিলেন লিওনেল মেসি। অধিনায়ক নিজে গোল করলেন এবং দলকে জেতালেন ২-০ গোলে। বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে এই জয় সাবেলার শিষ্যদের আরও আত্দবিশ্বাসী করে তুলল। আর দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি গোল পাওয়ায় স্বস্তিবোধ করছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও।
বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে আলবেসিলেস্তরা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোকে ৩-০ গোলে হারালেও গোল বঞ্চিত ছিলেন দলের মেসি। সমর্থকদের কপালে স্পষ্ট হচ্ছিল দুশ্চিন্তার বলিরেখা। 'তাহলে বার্সেলোনার মেসি কী এবারও আর্জেন্টিনার হতে পারবে না?' _অপ্রকাশিত এমন প্রশ্ন ছিল সবার মধ্যেই। মেসি গোল না পাওয়ায় ভক্তদের হৃদয় অদৃশ্য অনলে দগ্ধ হচ্ছিল। আত্দবিশ্বাসের ফানুসটাও ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছিল। ভক্তদের হতাশার ছবিটি যেমন মেসিও বুঝতে পেরেছিলেন, তেমনি কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলাও! যুদ্ধের ময়দানে নামার আগেই যদি 'ভয়' নামক বস্তুটি মনে ভর করে তবে বিজয় অর্জন করা কঠিন। তাই শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে গোল করে ভক্তদের মনের ভয়কে দূর করে দিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। শুধু তাই নয়, শেষ ৩০ মিনিটে ত্রিশূল মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া যে কৌশলী ফুটবল উপহার দিলেন, তাতে ভক্তদের আত্দবিশ্বাসের মাত্রাটা বেড়ে গেল হাজারগুণ। সে সঙ্গে হয়তো ভয় ঢুকে গেছে প্রতিপক্ষের শিবিরে। আর্জেন্টিনার কাছ থেকে এমন সুন্দর ফুটবল অনেক দিন কেউ দেখেনি।
৭৬ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে আগুয়েরোর হেড। তারপর অসাধারণ দক্ষতায় বলে আয়ত্তে নিয়ে প্রতিপক্ষের জালে প্রবেশ করিয়ে দেন মেসি। আর্জেন্টিনার জার্সি এটি তার চলতি বছরের প্রথম গোল। এমন একটি গোলের পর উচ্ছ্বসিত আর্জেন্টিনার ভক্তরা। আত্দবিশ্বাসী মেসিও। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, 'আর্জেন্টিনাকে অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করেন। কিন্তু আমরা কেমন দল তা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। মূল মঞ্চেই জানা যাবে আসল সত্য। সে ক্ষণ খুব নিকটে। ইতিমধ্যে প্রীতি ম্যাচগুলো শেষ। আমরা একটা প্রত্যাশা নিয়েই ব্রাজিল যাচ্ছি। সাবেলা যেভাবে আমাদের বলেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার আমরা অনেক শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ একটি দল। আমি মনে করি, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমাদের এই দলটি অনেক বেশি সংগঠিত। সবার মনেই বিজয়ের স্বপ্ন।'
শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ বলে কোচ সাবেলা দারুণ একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। একাদশে রাখেননি আর্জেন্টিনার সেরা চার তারকা মেসি, হিগুয়েন, আগুয়েরো ও ডি মারিয়াকে। রিজার্ভ বেঞ্চের সামর্থ্য পরখ করে নিতেই তারকাদের বসিয়ে রাখা হয়। কিন্তু তাতে কি? দলটা যে আর্জেন্টিনা! মাঠে যারাই নামুক না কেন খেলেন সর্বস্ব উজাড় করে। তাই ছন্দময় ফুটবল খেলে ১২ মিনিটেই আলবেসিলেস্তদের এগিয়ে দিলেন আলভারেজ। ডি-বাইরে থেকে জোরালো এক শটে দুর্দান্ত গোল। বাকি দুই ফরোয়ার্ড লেভেজ্জি ও ম্যাঙ্ িরদ্রিগেজও তাদের ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের ইস্পাত কঠিন রূপটাও এ ম্যাচে প্রদর্শিত হয়। প্রথমার্ধে স্লোভেনিয়ার স্ট্রাইকাররা যেন ভিড়তেই পারেনি। অর্থাৎ কোচ সাবেলার পরীক্ষায় ১০০তে যেন পুরো ১০০ নম্বরই পেয়ে গেলেন রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা।
৫৮ মিনিটে মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া নামার পর তো আর স্লোভেনিয়াকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের পেছনে পেছনে দৌড়াতেই সময় শেষ। মেসিদের ছন্দময় ফুটবল দেখে হয়তো ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা এফ গ্রুপের বাকি তিন দল বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ইরান ও নাইজেরিয়ার। ১৫ জুন মারাকানায় বসনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি দিয়ে শুরু হবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন। গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচে ২১ জুন ইরানের বিরুদ্ধে এবং ২৫ জুন নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে খেলবেন মেসিরা।
শুধু গ্রুপের তিন সদস্যই নয়, এবারের আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ভয়ে আছে ফেবারিট অন্য দলগুলোও। কারণ মেসি-হিগুয়েন-আগুয়েরো-ডি মারিয়াকে নিয়ে গড়া আলবেসিলেস্তদের আক্রমণভাগ যে এবার বিশ্বসেরা তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না! সেসঙ্গে রক্ষণভাগও যদি ইস্পাত কঠিন হয়ে যায়, তাহলে সমর্থকরা নিশ্চিত থাকতে পারেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপের শিরোপা জিতবে মেসির আর্জেন্টিনাই!