একদিকে উন্মাদনা আরেকদিকে উৎকণ্ঠা। পুরো ব্রাজিল যখন সাত রঙের বাহারি সাজে সেজে উঠছে বিশ্বকে স্বাগত জানানোর জন্য। স্টেডিয়ামগুলোর কাজ শেষ করেছে ব্রাজিল। ২০তম বিশ্বকাপকে বরণ করতে প্রস্তুত ভক্তরা। সাম্বা নাচের ছন্দে ছন্দেই শেষ মুহূর্তগুলো পার করছে ল্যাটিনরা। তবে এখনো শেষ হয়নি রাস্তার মিছিল। ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসা আগুনের হলকা এখনো বেশ অনুভব করা যাচ্ছে সাও পাওলোর অলিতে গলিতে। বিশ্বকাপের ঠিক পূর্ব মুহূর্তেও বিরোধী পক্ষকে সামলাতে ব্যস্ত ব্রাজিলিয়ান সরকার। উৎসবের আয়োজনেও কোথায় যেন একটু ফাঁক রয়ে গেল ব্রাজিলিয়ানদের!
গত পরশু বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের ভেন্যু করিন্থিয়ানস এরিনার অদূরেই পুলিশকে নিক্ষেপ করতে হলো কাঁদানে গ্যাস। ১৫০ জন প্রতিবাদকারীর একটা জটলাকে দ্রুত ছত্রভঙ্গ করলেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে অন্যখানে। ২০ মিলিয়ন জনতার বসবাস সাও পাওলোতে। প্রতিদিন এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন জনতা মেট্রো রেল ব্যবহার করেন। কিন্তু পাঁচদিন ধরে মেট্রো রেল শ্রমিকরা ধর্মঘট চালাচ্ছেন সাও পাওলোতে! ধর্মঘটকারীরা বলছেন, 'এখানে কোনো বিশ্বকাপ হবে না। কেবল ধর্মঘট হবে।' ১৬.৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছে ধর্মঘটকারীরা। আলোচনা শেষে তারা ১২.২ শতাংশ পর্যন্ত মেনে নিতে হয়েছে। তবে সরকার শ্রমিকদের ৮.৭ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি মেনে নিতে বলেছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে ব্রাজিলে। সাও পাওলোর করিন্থিয়ানস এরিনায় ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে প্রায় ৬০ হাজার ফুটবলভক্ত জড়ো হবেন। মেট্রো রেল বন্ধ থাকলে বিপদেই পড়তে হবে তাদেরকে!
বাধা এখনো দূরীভূত হয়নি। ঈশান কোণে মেঘ জমেই আছে। আটলান্টিকের গভীর জলরাশি থেকে কোনো এক সাইক্লোন উঠতেই পারে। তাই বলে থেমে নেই ব্রাজিলিয়ানরা। থেমে নেই বিশ্ব ফুটবলের তাবত ভক্ত। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানি, ইতালিকে নিয়ে তারা মেতে আছে। প্রিয় তারকার জার্সি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিপণি বিতানগুলোতে। যাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের কোনো একটা ম্যাচেরও টিকিট মিলছে, ব্রাজিল যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন তারা। ব্রাজিলের সমুদ্র সৈকত সেজে উঠছে। ফুটবল ভক্তদের স্বাগত জানানোর জন্য ব্রাজিলিয়ানদের প্রস্তুতিটাও অসাধারণ। হয়ত শেষ মুহূর্তে ফুটবলভক্তদের স্বাগত জানানোর জন্য সবার সঙ্গে শামিল হবেন বর্তমান বিক্ষোভকারীরাও।
বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য বেশিরভাগ দলই ব্রাজিলে পৌঁছে গেছে। প্রস্তুতিও প্রায় শেষ হয়েছে সবার। ১২ জুন ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ২০তম বিশ্বকাপের লড়াই। কে হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন? ব্রাজিলের হেঙ্া হবে কি? নাকি ইতালিয়ানদের পেন্টা হয়ে যাবে ব্রাজিলে? স্পেন কি টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরবে? মেসিদের স্বপ্ন পূরণ হবে তো? নাকি জার্মানরা আবারও সোনার ট্রফিতে চুমু খাবে। ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের সম্ভাবনাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনকি নতুন কোনো চ্যাম্পিয়নের দেখাও মিলতে পারে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল আছে না! আছে তো রোবেন-পার্সিদের নেদারল্যান্ডসও। এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে 'দি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। দেখা যাক, পেলের আকাঙ্ক্ষাটা পূরণ হয় কিনা। মারাকানাজো ভুলে যেতে পেলে চান এবার ব্রাজিল-উরুগুয়ে ফাইনাল। যেখানে ১৯৫০'র প্রতিশোধ নেবেন নেইমাররা! অন্তত পেলে তো এমনটাই বিশ্বাস করেন।