মেলবোর্ন কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্বে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ চলছে। গতকালও ঢাকা শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ কেন, ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এমনকি ভারতও বাদ যাচ্ছে না। সত্যি বলতে কি, বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত শক্তিশালী দল। এখনো তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাই কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারানোটা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল না। প্রথমে ব্যাটিং করে ৩০৩ রানের বিশাল টার্গেট দেওয়ায় ম্যাচে তারাই ছিল সুবিধাজনক অবস্থানে। ক্রিকেট ইতিহাসে মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে কেউ ৩০০ রান অতিক্রম করে জিততে পারেনি। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে ভালো খেললেও এই টার্গেট অতিক্রম করাটা কষ্টকরই ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। ১০৯ রানের ব্যবধানে হেরে মাশরাফিরা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। একই পথে হেঁটেছে দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিদায়টা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কেননা তাদের হার নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। কিন্তু বাংলাদেশের হার নিয়ে শুধু প্রশ্নই ওঠেনি, এলিট শ্রেণির খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটের প্রতি ঘৃণাও জন্ম দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ বিদায় নিলে কোনো বিতর্ক উঠত না। কিন্তু মেলবোর্নের কোয়ার্টার ফাইনাল দেখে মনে হয়েছে আম্পয়ার ইয়ান গোল্ড, আলিম দার ও থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন কোনো অবস্থায় যেন বাংলাদেশ না জিতে। তা না হলে ম্যাচে মাশরাফিদের প্রতি এমন অন্যায় আচরণ করবেন কেন? ফুটবলে যেমন রেফারিরা ভুল করেন তা ক্রিকেটেও হয়ে থাকে। কিন্তু মেলবোর্নে তিন আম্পায়ার মিলে যা করলেন তা কি ভুল বলা যায়? তিন তিনটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে। যা দেখে মনে হয়েছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ পথ বেছে নিয়েছেন। কারণ ভুল না হয় একটা মানা যায়। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনটা বাজে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, তাহলে কি তাকে ভুল বলা যাবে। এখানে স্পষ্টই পক্ষপাতিত্বের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। রোহিত শর্মার পরিষ্কার ক্যাচ আউটকে নো বল ঘোষণা করা। সুরেশ রায়না এলবিডবি্লউ আউট হওয়ার পরও থার্ড আম্পায়ারের নাকচ করে দেওয়া। শুধু তাই নয়, মাহমুদুল্লাহ এবার দারুণ ব্যাটিং করলেও তাকে আম্পায়ারের শিকার হতে হয়েছে। দেখা গেল দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও মাহমুদুল্লাহ যখন ব্যাটিং করতে এলেন তখন অনেকে বড় রান তোলার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। অথচ তাকেও শিকার হতে হলো আম্পায়ারের। টিভিতে স্পষ্ট দেখা গেল মাহমুদুল্লাহর ছক্কা দড়ি ক্রস করেছে। কিন্তু তাকে ক্যাচ আউট দিয়ে সাজঘরে পাঠানো হলো। শিখর ধাওয়ান তার বল হাতের তালুতে বন্দী করলেও তার পা দড়ির বাইরে চলে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ম্যাচের অনেক কিছুই একাধিকবার রিপ্লে দেখানো হয়েছে। কিন্তু শিখরের দড়ি ক্রস করা ক্যাচের দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাতে কী আছে, আধুনিক প্রযুক্তিতে কোনো কিছু কি লুকানো যায়। ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকার ছবিতেই প্রমাণ মিলেছে মাহমুদুল্লাহ আউট ছিলেন না। এমনকি তামিমের ক্যাচ আউটও ছিল বিতর্কিত। এক ম্যাচে যদি এত পক্ষপাতিত্ব করা হয় তাহলে দলের কি স্পিরিট আর থাকে। আসলে এমন বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হলো। প্রশ্ন উঠেছে, আম্পায়াররা কেন এমন নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব করলেন? এ ব্যাপারে উত্তর এসেছে একটাই ভারতকে খুশি করার জন্য। কারণ ক্রিকেটে তাদের প্রভাব অন্য রকম। তাদের অর্থ দিয়েই নাকি মূলত বিশ্ব ক্রিকেট চলে। এখন প্রভাব আর অর্থশালী বলে কোনো দলকে যদি জিতিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অযথা আর বিশ্বকাপের আয়োজন করে লাভ কী? আইসিসি চার বছর পরপর ভারতকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেই পারে। ক্রিকেটে নোংরামি ঢুকে গেছে বলে এ খেলার জনপ্রিয়তা কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাফিয়াদের হাতে বন্দী ক্রিকেট। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই।