রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের নাজিম উদ্দীনের ছেলে আমিরুজ্জামান সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ও সুখের আশায় ২০০৮ সালে স্ত্রী সন্তান রেখে মালয়েশিয়া চলে যান কাজের সন্ধানে। কয়েক বছর কাজ করার পরে মালয়েশিয়ায় ১২ বছর আগে নিখোঁজ হন। নয় মাস আগে তার মৃত্যু হলে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালের হিমঘরে তার লাশ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। শনিবার তার লাশ মালয়েশিয়া থেকে এনে উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের পাইকান গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিমানযোগে বাংলাদেশে তার লাশ আনা হয়। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হার্ট এ্যাটাকে তিনি মারা যান।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ৩ ভাই, ৩ বোনের মধ্যে আমিরুজ্জামান ছিলেন ২য় সন্তান। মালয়েশিয়া যাওয়ার পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার সাথে পরিবারের নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও ২০১৪ সালের পর বাড়ীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কেন, কি কারণে যোগাযোগ বন্ধ ছিল, তা কেউ বলতে পারেননি। তার বৃদ্ধা মা, ভাই-বোনেরা, স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে সন্তান তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে শোকে আচ্ছন্ন ছিলেন। তারা ধরে নিয়েছিলেন আমিরুজ্জামান মারা গেছেন।
২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হার্ট এ্যাটাকে আমিরুজ্জামান মারা গেলে সেখানকার পুলিশ ১৭ নভেম্বর মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসকে অবগত করেন। মৃত্যুর ৯ মাস পর বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে আমিরুজ্জামানের স্ত্রী রিক্তা বেগমকে মোবাইলে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। গত শুক্রবার বিমানযোগে মৃতদেহ দেশে এনে শনিবার সকালে আমিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ী পাঁচগাছি ইউনিয়নের পাইকান গ্রামে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
আমিরুজ্জামানের স্ত্রী রিক্তা বেগম জানান, মাত্র ৪ বছর স্বামীর সাথে সংসার করেছি। তারপর তিনি বিদেশে গেলেন। ২০১৪ সালের পর তিনি যোগাযোগ করেননি। সংসারই বুঝলাম না, আর ১৭ বছর পরে স্বামীর লাশ পেলাম! আমার মতো এমন ভাগ্য যেন কারো না হয়।
আমিরুজ্জামানের আড়াই বছর বয়সী ছেলে ফেরদৌস হাসান রিমন এখন ২৩ বছর বয়সী। তিনি বিয়ে করে এক সন্তানের জনক হয়েছেন। তিনি বলেন, আব্বাকে দেখার স্মৃতি মনে নেই! তার সাথে কথা বলা বা দেখার জন্য অনেক দিন কেঁদেছি। আজ আব্বাকে কবরে শুইয়ে দিলাম। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ড থেকে দাফন কাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
আমিরুজ্জামানের ভাই রাজু মন্ডল বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর কোনো যোগাযোগ না থাকায় আমরা মনে করেছিলাম ভাই মারা গেছেন। হঠাৎ জানতে পারি ভাইয়ের লাশ মালয়েশিয়ার হাসপাতালের হিম ঘরে রয়েছে। ভাইয়ের লাশ দেশের মাটিতে দাফন করতে পেরে আমরা কিছুটা হলেও সান্তনা পেয়েছি।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মন্ডল জানান, বিষয়টি বেদনাদায়ক। দীর্ঘদিন পরে আমিরুজ্জামানের খোঁজ পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়। কি কারণে তিনি এতদিন নিখোঁজ ছিলেন তা রহস্যই থেকে গেল।
উল্লেখ্য, আমিরুজ্জামানের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়ে যায়। তার ভিসায় দেখা গেছে, মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের একটি শহর সুবানে একটি কোম্পানিতে চাকরির অনুমতি ছিল।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল