মিচেল স্টার্কের একেকটা বল ছুটে আসছে কামানের গোলার মতো। ইয়র্কার আর বাউন্সের সঙ্গে যোগ হয়েছে দুরন্ত গতি। যে কোনো ক্রিকেটভক্ত মুগ্ধ হতে পারে স্টার্কের চোখ ধাঁধানো সব আক্রমণে। এক সময় গ্লেন ম্যাকগ্রাকে দেখে এমনই মুগ্ধ হতো ক্রিকেটভক্তরা। কী অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ লাইন-লেন্থে। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনে প্রথম আঘাতটা হেনেছিলেন বাঁ-হাতি স্টার্কই। এরপর হ্যাজলউড আর ম্যাক্সওয়েলদের আক্রমণে একে একে পতন হতে থাকে মিসবাহ, আকমল, শেহজাদ আর আফ্রিদিদের। এই পতনের ধারাতেই ৪৯.৫ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে বোর্ডে ২১৩ রান জোগাড় করে পাকিস্তান। অসি বোলারদের দুর্দান্ত আক্রমণে বিধ্বস্ত পাকিস্তানের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালান স্টিভেন স্মিথ, ওয়াটসন এবং ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৩৩.৫ ওভারেই অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেন সেমিফাইনালের টিকিট। পাকিস্তানের প্রহরীরা দুর্গপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে পরিচয় দিলেন চরম অবহেলার। মিস ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের মহড়ায় রাহাতরা যোগ করলেন নতুন মাত্রা! পাকিস্তানের এমন অসংখ্য দুর্বলতার সুযোগে অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটের জয় নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ চারে ভারতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল। ২৬ মার্চ বিশ্বকাপের দুই ফেবারিট মুখোমুখি হবে সিডনিতে। প্রায় ২৩ বছর আগে নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপের আয়োজন হলে অ্যালান বোর্ডারের দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল অস্ট্রেলিয়ানরা। ১৯৮৭'র চ্যাম্পিয়নরা আরও একবার বিশ্ব সেরার মুকুট জয় করবে বলেই ভেবেছিল ওরা। তবে রাউন্ড রবিন পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় অ্যালান বোর্ডারদের। সেবার ক্যাঙ্গারুদের বিদায়ের পিছনে দায়ী ছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। পার্থে অসিদের ৪৮ রানে হারিয়েছিলেন ইমরান-আকরামরা। তারপরও দুই দলের ঝুলিতেই ছিল ৪টি করে জয়। বৃষ্টির সুবিধা নিয়ে এক পয়েন্ট অতিরিক্ত পেয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে শেষ চারে স্থান করে নিয়েছিল ১৯৯২'র চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ইমরানদের মতো বৃষ্টির সুবিধা পাননি মিসবাহরা। তারপরও গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও হারিয়েছেন। শেষ আটে জায়গা করে নিতে পূরণ করেছেন সবগুলো শর্ত। তবে থেমে যেতে হলো কোয়ার্টার ফাইনালেই। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী বোলিং, ব্যাটিং এবং দুরন্ত ফিল্ডিং অ্যাডিলেড ওভালে পাকিস্তানকে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। ১৯৯২'র আফসোস কিছুটা হলেও দূর হলো অস্ট্রেলিয়ার! আর মাত্র দুইটা ম্যাচ জিতলেই তো বিশ্বকাপের পঞ্চম শিরোপা ঘরে তুলবে ক্যাঙ্গারুরা! উৎসবের মঞ্চ অস্ট্রেলিয়ানরা প্রস্তুত করতেই পারে। একদিকে মাইকেল ক্লার্ক বিতর্ক পিছনে ফেলে দলকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার যারা ফর্মে ছিলেন না তারাও পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে ফিরলেন ফর্মে।
জন বুকানন দিন কয়েক আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে অ্যাডিলেডেই চেষ্টা করতে হবে। সিডনিতে ওদের হারানো সম্ভব নয়। কেন? কারণ, ওটা অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ। এ মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে একবারই হারিয়েছে ভারত (২০০৮ সালে)। আর অসিদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে ১২বার! দীর্ঘদিন বুকানন ছিলেন রিকি পন্টিংদের গুরু। তার হুঁশিয়ারিটা ভারত ধর্তব্যে না নিয়ে পারবে না। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো আম্পায়ারের আনুকূল্যও পাওয়া যাবে না। অস্ট্রেলিয়া তো আর বাংলাদেশ নয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৪৯.৫ ওভারে ২১৩ (হারিস ৪১, মিসবাহ ৩৪, হ্যাজলউড ৪/৩৫)।
অস্ট্রেলিয়া : ৩৩.৫ ওভারে ২১৬/৪ (স্মিথ ৬৫, ওয়াটসন ৬৪,
ওয়াহাব ২/৫৪)।
ফলাফল : অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : জোশ হ্যাজলউড।