মালদ্বীপে মধুচন্দ্রিমা শেষে দেশে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম। ফিরেই নাসির হোসেন, রুবেল হোসেনকে নিয়ে উড়ে গেছেন কক্সবাজার বিচ ক্রিকেট খেলতে। এসব অবশ্য বিশ্রামে থেকেই করছেন। বিশ্রাম করে যখন নিজেকে মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করতে চাচ্ছেন দেশসেরা ব্যাটসম্যান, তখন তাকে নিয়ে জোর আলোচনা মিডিয়ায়। আলোচনা তার টেস্ট অধিনায়কত্ব ও উইকেট কিপিং নিয়ে। কাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, অধিনায়কত্ব নিয়ে সরাসরি কিছু না বলে বল ঠেলে দেন মুশফিকের কোর্টে। তবে এটা বলেছেন, অধিনায়কত্ব নয়, কিপিং ছাড়া উচিত মুশফিকের।
খুলনা টেস্টে মোহাম্মদ শহীদের বলে ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুলে ব্যথা পান। এরপর আর ফিল্ডিং করতে পারেননি। আহত হয়ে হঠাৎই হারিয়ে ফেরেন ফর্ম। দুর্দান্ত খেলতে থাকা মুশফিকের ব্যাট থেকে রান আসে মাত্র ০, ৩২, ১২ ও ০। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের নামের পাশে যা বড্ড বেমানান। তাই ফের কথা উঠেছে, মুশফিক যেন টেস্ট ক্রিকেটে শুধুমাত্র একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। সেটাই কাল আবার বললেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, 'মুশফিক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। আমার মতে দলের সেরা ব্যাটসম্যান। তার উপর দলের অধিনায়ক। তাই আমি মনে করি তার উপর বাড়তি চাপ কাজ করে। এছাড়াও সে উইকেটরক্ষক। উইকেট কিপিং করে আহত হলে ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়ে। তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়লে দলের উপরও পড়ে। খেয়াল করে দেখেন, ইনজূরির জন্য গত টেস্টে ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি। এতে আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। তিনটি করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব, মুশফিকের মতো ক্রিকেটারকে যদি কিছু ছাড়তে হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই উইকেট কিপিং। অবশ্য আমাদের হাতে এখন বাড়তি কোনো অপশন নেই। যদি এনামুল হক বিজয় থাকত, তাহলে তাকে দিয়ে কিপিং করাতাম। কেননা মুশফিক আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। তাকে নির্ভারচিত্তে ব্যাটিং করতে দেওয়া উচিত।' টেস্ট ক্রিকেটে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার রেকর্ড রয়েছে। শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ওয়ানডে ক্রিকেটে কিপিং করলেও টেস্টে কিপিং করতেন না। সেই উদাহরণ আছে মুশফিকের সামনে।
মিরপুর টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ফিল্ডিং নেওয়ার রহস্য এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি কেউ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর ভারত যখন বাংলাদেশ সফরে আসে, তখন প্রচণ্ড গরমের মাঝে ব্যাটিং উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় শুধু সমালোচিতই হননি হাবিবুল বাশার, অধিনায়কত্বও হারিয়েছিলেন। এবার টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মুশফিকের। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, 'এ বছর মুশফিকের অধিনায়কত্ব বদলানোর কোনো কারণই দেখছি না। এটাও ঠিক, আমাদের যে দল, তাতে অপশনও নেই। সত্যি বলতে আমাদের হাতে বেটার অপশনও নেই।' বিসিবি সভাপতি এ বছর না হওয়ার কথা বললেও বাতাসে গুঞ্জন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই বদলে যেতে পারে মুশফিকের অধিনায়কত্ব। নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হতে পারে মাশরাফির হাতে।' মাশরাফি এখন ওয়ানডে অধিনায়ক। ২০০৯ সালে সর্বশেষ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। অবশ্য আরও দুজন প্রার্থী রয়েছে তালিকায়। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল।
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় অনেকের মতো অবাক হয়েছিলেন বিসিবি সভাপতিও। মিরপুর টেস্ট চলাকালীন বিসিবি সভাপতি ছিলেন লন্ডনে। সেখানে বসেই শুনেছিলেন সিদ্ধান্তের কথা। এরপর তিনি কারণ জানতে চেয়ে ফোন করে কথা বলেন সাকিবের সঙ্গে, 'টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে ফোন করি। তখন কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। সাকিব জানান, সবাই মিলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য আমাদের দুর্ভাগ্য থাকায় শাহাদাত রাজীব বোলিং করতে পারেননি। এটার জন্য দলকে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে।'
বিশ্বকাপ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন প্রস্তুত হচ্ছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। তার আগে এমন আলোচনা দলের মনোবলে চিড় ধরাতে পারে!