কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ওপেনিংয়ে। তামিম ইকবাল রান পাচ্ছিলেন না। ধারাবাহিক ছিলেন না এনামুল হক বিজয়ও। তাই ওপেনিং জুটিতে বড় স্কোর ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু এখন সে সমস্যা নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে সাফল্যের পর সবকিছু পাল্টে গেছে। ওপেনাররা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তাছাড়া এখন পাইপলাইনেও রয়েছে বেশ কয়েকজন ওপেনার। তাই ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে দল গঠন করতে হয়তো মধুর সমস্যায় সম্মুখীন হতে পারেন নির্বাচকরা!
কাকে রেখে কাকে নেবেন? ফর্মে থাকার পরও বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়া ওপেনার এনামুল হক বিজয় পাকিস্তান সিরিজে সুযোগই পাননি। কেননা তার জায়গাটা খুব ভালোভাবেই দখল করে নিয়েছেন সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন বিজয়। তারপর থেকে তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপেই পারফরম্যান্সের দ্যুতি দেখিয়েছেন তিনি। আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তো ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরিও করেছেন। তাই এখন তামিমের সঙ্গী হিসেবে ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে সৌম্যকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ব্যাটিং করেছেন বিজয়। তাই ভারত সিরিজে তিনিও ওপেনার হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তামিম-সৌম্য জুটি-ই তো সেরা!
শুধু বিজয় কেন, জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন রনি তালুকদার ও লিটন কুমারও জাতীয় দলে ওপেনার করার জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে দলেও ছিলেন রনি। কিন্তু তামিম-সৌম্য এতো ভালো পারফর্ম করেছেন যে, তার অভিষেক ঘটানোর সুযোগই পাননি টিম ম্যানেজমেন্ট। তাছাড়া পাইপলাইনে আরেক ভয়ঙ্কর ওপেনার লিটন কুমার দাসও রয়েছেন দারুণ ফর্মে। এখন কেউ একবার দল থেকে ছিটকে পড়লে তার দলে সুযোগ পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে একটি তামিম ইকবালের ফর্মে ফেরা। বিশ্বকাপে পুরো দল ভালো খেললেও তামিম তার খোলস থেকে বের হতে পারেননি। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল তার। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই তামিম হয়ে গেলেন টুর্নামেন্ট সেরা। একটি হাফ সেঞ্চুরি ছাড়াও টানা দুই সেঞ্চুরি করলেন ড্যাসিং ওপেনার। টেস্টেও অন্য তামিমকে দেখলেন দেশবাসী। যদিও সব শেষ দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি ছিল তামিমের। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খুলনা টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন তিনি। মুশফিকুর রহিমকে টপকে তিনি এখন টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক।
দলে এখন পারফরমারের সংখ্যা অনেক বেশি। একজন কিংবা দুইজন খারাপ করলেও অন্য ক্রিকেটাররা তা বুঝতেই দিচ্ছেন না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টপ অর্ডার দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিল। বিশেষ করে দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য এবং চার নম্বরে ব্যাটিং করা মুশফিকুর রহিম। তিন ব্যাটসম্যানই নিয়মিত রান করে পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়েছিল। দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তো নিয়মিত ব্যাটিং করার সুযোগই পাননি।
পাকিস্তান সিরিজে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় ছিল যে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু পাকিস্তান সিরিজে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। অথচ তারপরেও কোনো মাহমুদুল্লাহর অভাববোধ হয়নি। বাংলাদেশ দল যে এখন আর কোনো একক ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরশীল নয় তা বোঝা গেল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেই। জুনেই বাংলাদেশ সফরে আসছে ভারত। সে সফরেও ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। ওই সিরিজেও ব্যাটিংয়ে বড় দায়িত্ব নিতে হবে টপ অর্ডারদের। বিশেষ করে দুই ওপেনারকে। কেননা শুরুটা ভালো হলে বড় স্কোর করা সহজ হয়ে যায়।