প্রিমিয়ার হকি লিগের ভবিষ্যৎ কী? গত মৌসুমে মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং বয়কট করলেও লিগ মাঠে গড়িয়েছে। এবারও হকি ফেডারেশন চাচ্ছে লিগ নামাতে। সে লক্ষ্যে দলবদলের তারিখ ঘোষণা করেছে। কিন্তু যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে মাঠে খেলা গড়ানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে খেলোয়াড়রা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কেননা প্রিমিয়ার লিগই একমাত্র তাদের আয়ের উৎস। লিগ না হলে তারা চলবে কীভাবে? জটিলতা দূর করতে কিছুদিন আগে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ক্লাব প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় দুঘণ্টা আলোচনা হলেও কোনো সমাধান বের করা সম্ভব হয়নি। মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং উপমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছে লিগ খেলতে তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু তার আগে ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে। হকির শীর্ষ পর্যায়ে আরেক ক্লাব ঊষা ক্রীড়াচক্র অবশ্য এমন দাবি তুলেনি। কিন্তু এটা বলছে মোহামেডান-মেরিনার্সের মতো বড় দল না খেললে তারা সমস্যার মধ্যে পড়বে। তাদের ডোনারদের বক্তব্য হচ্ছে মোহামেডান ও মেরিনার্সের মতো বড় দল না খেললে অযথা অর্থ খরচ করে শক্তিশালী দল গঠনের প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে আবাহনীও বলেছে সবাইকে নিয়ে লিগ হওয়া উচিত। তা না হলে আকর্ষণ থাকে না। লিগ শুরু করা কোনো ব্যাপারই না যদি চার ক্লাব তাদের দাবি থেকে সরে আসত। উপমন্ত্রী বৈঠকে ক্লাবগুলোকে আশ্বাস দিয়েছেন হকির জন্য যা মঙ্গলকর তা নিয়েই তিনি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করবেন এবং খুব শিগগিরই লিগ মাঠে গড়াবে তা নিয়ে তিনি আশাবাদী। কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব। কারণ মোহামেডান, মেরিনার্সের একই কথা ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা হকির কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নেবে না। তাহলে সামনে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে বৈঠকে বসবেন তাতে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কি? এখানে সমস্যা একটাই কমিটি বিলুপ্তি। জানা গেছে, এ ব্যাপারে উপমন্ত্রী কিছুটা নরম হলেও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার কোনোভাবেই চান না নির্বাচিত কমিটির বিলুপ্তি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত রয়েছে। গতকাল প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, উপমন্ত্রী জয় সমস্যা নিরসনের জন্য আলোচনায় বসেছিলেন। সামনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমিও বসবো। হকি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। তাই প্রিমিয়ার লিগের অচলাবস্থা কারও কাম্য নয়। কিভাবে এর সমাধান দেবেন? বীরেন বলেন, আলাপ-আলোচনা করে সব জটিলতা দূর করা সম্ভব। তাহলে কি ফেডারেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন। দেখেন দাবি-দাওয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাস্তব দিকটাও চিন্তা করতে হবে। ইতিমধ্যে অনেকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমার আলাপ হয়েছে। তারা লিগ খেলতে চায়। এখন যে সমস্যাটা লিগে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা আলোচনার মাধ্যম কাটানো সম্ভব। সবকিছু মানাতো সম্ভব না। এখানে কিছু ছাড় দিতে হবে। আমার বিশ্বাস হকির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে উভয়পক্ষই কিছু ছাড় দেবে। কমিটি বিলুপ্ত করলেই কি সমস্যার কেটে যাবে? এর নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে। তখন আবার নতুন জটিলতা দেখা দিতে পারে। সুতরাং বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে লিগ যেন শুরু করা যায় সেদিকেই নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সমস্যা সৃষ্টি হয় সমাধানের জন্যই।