ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অষ্টম আসরের শেষ চারে একটি মাত্র পয়েন্টের জন্য জায়গা হয়নি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের। তবে ভালো ক্রিকেট খেলেছে দলটি। আর এই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ থাকায় মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল সাকিবের। আর বাংলাদেশি অলরাউন্ডার না খেলতে পারায় কলকাতা শেষ চারে যেতে পারেনি এমনটা মনে করছেন কলকাতার এবিপি গণমাধ্যম। সোমবার এবিপির অনলাইন ভার্সনে সাকিবকে প্রশংসা করে লেখা ওই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
মুম্বাই-হায়দরাবাদ ম্যাচে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে কেকেআর নিয়ে লিখতে বসেও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, টিমটা প্লে অফ খেলবে না। ভাবাটা কঠিন হচ্ছে এই কারণে যে, কেকেআর আইপিএল আটের অন্যতম সেরা টিম ছিল। ওপেনাররা ভাল খেলছিল, মিডল অর্ডারে আন্দ্রে রাসেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ছিল। ইউসুফ পাঠান— ভেবে দেখুন তো গত তিন বছরে এর চেয়ে ভাল ফর্মে দেখেছেন কি? ব্র্যাড হগ, পীযূষ চাওলারাও দুর্দান্ত বল করেছে। তার পরেও পারল না কেকেআর, ভেবে আশ্চর্য লাগছে।
গোটা পাঁচ-ছয় কারণে কেকেআরকে এ ভাবে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হল। কোথাও না কোথাও যে ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে টিমটাকে আর একটা পয়েন্ট পাওয়া থেকে আটকে দিল, যেটা পেলেই ওরা প্লে অফে চলে যেতে পারত।
সাকিবের অভাব: আইপিএল সেভেনে কেকেআর যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিন্তু বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের ছিল। ও (সাকিব) থাকা মানে মিডল অর্ডার ব্যাটিংটা শক্তিশালী হবে। আবার বোলিংয়েও চারটে ওভার করিয়ে দেওয়া যাবে। আর সেই সাকিবকেই এ বার সাত-আটটা ম্যাচ পেল না কেকেআর। মাঝের এই সময়টায় নাইটরা কয়েকটা ম্যাচ হেরে গেল। কখনও কখনও দেখলাম, জোহান বোথাকে নামানো হল ওর বদলি হিসেবে। কিন্তু লাভ হল না। ধাক্কাটা যেমন ছিল, তেমনই থেকে গেল।
নারিন-জট: ওর অ্যাকশন নিয়ে একটার পর একটা সমস্যা কোথাও গিয়ে মনে হয় ওর সঙ্গে টিমেও প্রভাব ফেলেছিল। একে তো নারিন কেকেআরের এক নম্বর বোলার। অ্যাকশন নিয়ে পরের পর বিতর্কে ওর বোলিং আগের মতো আর থাকল না। প্রথম দিকে উইকেট পায়নি, রানও দিয়েছে। ইডেনে আরসিবি ম্যাচে তো নারিনকে অতি গুরুত্বপূ্র্ণ সময়ে একটা ছয়ও মেরে দেয় হর্ষল পটেল। আবার সানরাইজার্সের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৮ দেয়। তার পর নারিনকে নিয়ে ক্রমাগত টেনশন টিমটারও ফোকাস বোধহয় কিছুটা নড়িয়ে দিয়েছিল। আসলে আপনার সেরা বোলারকে নিয়ে যদি রোজ-রোজ ঝামেলা হয়, ড্রেসিংরুমে সেটা নিয়ে আলোচনা সাধারণত চলে। যেমন, আবার কবে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে নারিন? রিপোর্টটা কবে আসবে? এ ধরনের কিছু প্রশ্ন। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো একটা টিমে নেগেটিভ ব্যাপার ঢুকিয়ে দিতে পারে।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা: একটা উদাহরণ দেব। সূর্যকুমার যাদবকে একটা সময় টানা চারে খেলিয়ে যাওয়া। সূর্যকে আমি বেশ কয়েক বছর ধরে চিনি। ও পরে এসে ১০ বলে ২০ দেবে। কিন্তু তিরিশ বলে পঞ্চাশ করতে গেলে মুশকিলে পড়বে। সিএসকে-র সঙ্গে যেমন চারে নেমে ২৬ বলে ১৬ করে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দু’রানে ওই হার নাইটরা ভুলতে পারবে না।
ক্লোজ ম্যাচ হারা: যে ক’টা ম্যাচ কেকেআর এবার হেরেছে, একটাও কিন্তু বড় ব্যবধানে নয়। কখনও দু’রান, কখনও চার, কখনও নয়। মানে, একটা শটের ব্যাপার ছিল। বলতে চাইছি, কেকেআরকে কেউ দাপট দেখিয়ে হারাতে পারেনি। কোন রকমে হারিয়েছে। যে ম্যাচগুলো কেকেআরও জিততে পারত। আইপিএলের মতো লম্বা টুর্নামেন্টে ক্লোজ ম্যাচ খুব বেশি হারলে পরে মুশকিল হয়ে যায়। কেকেআরেও সেটা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ মে, ২০১৫/মাহবুব