কাজী সালাউদ্দিন, মনোয়ার হোসেন নান্নু, শহিদুর রহমান সান্টু, কায়সার হামিদ, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, মোনেম মুন্না- এক একজন ছিলেন সত্তর-আশির দশকে ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ওই দুই দশকে ফুটবলে উত্তাল ছিল গোটা দেশ। উদীয়মান তরুণরা নিজেদের মধ্যে খুঁজতেন ওইসব কিংবদন্তি ফুটবলারের ছবি! পচা খড়-জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলেও সালাউদ্দিন-আসলাম-মুন্না হওয়ার স্বপ্ন দেখত গ্রামগঞ্জের তরুণরা।
১৯৮৫ সালে হকির এশিয়া কাপ বাংলাদেশে হওয়ায় তখন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল উন্মাদনা। ওই সময় হকির জনপ্রিয়তা এত বেড়ে গিয়েছিল যে পথেঘাটে দেখা তরুণ গাছের ডাল ভেঙেও হকি খেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু হকি ফেডারেশন তাদের ব্যর্থতার কারণেই সে উন্মাদনা ধরে রাখতে পারেনি।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে 'সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট' আয়োজন করায় নব্বইয়ের দশক ছিল ক্রিকেটের দখলে। ফুটবলার আলফাজ আহমেদ, আমিনুল হকদের ছাপিয়ে এই দশকের শেষের দিকে বড় তারকা হয়ে যান ক্রিকেটার আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে সে কী উচ্ছ্বাস! পথেঘাটে তরুণরা যেন আনমনেও ব্যাট চালানোর মতো ভঙ্গি করত। কেউ বা দু-চার কদম দৌড়ে বোলিং করার মতো হাত ঘোরাত। এখনো ক্রীড়াঙ্গনকে শাসন করছে ক্রিকেটই। বর্তমানে চলছে সাকিব-মুশফিক মেনিয়া! বাংলাদেশ নিয়মিত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করায় ক্রিকেটাররাই যেন তরুণদের নয়নের মণি! অথচ এই ক্রিকেট একসময় কোথায় ছিল! একটা টুর্নামেন্টের আয়োজনই তো সব বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
এবার খুলতে যাচ্ছে গলফে সম্ভাবনার দ্বার। এশিয়ার ট্যুরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই ২০১০ সালেই সিদ্দিকুর রহমান আলোড়ন তুলেছিলেন। কিন্তু গলফ নিয়ে যতটা জাগরণ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি ক্রিকেটের আধিপত্যের কারণে। এবার প্রথমবারের মতো বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বসছে গলফের বড় আয়োজন এশিয়ান ট্যুর। ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জাগরণ। হয়তো এ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে পুরো দেশ গলফের জোয়ারে ভাসবে। তখন সাকিব-মুশফিকদের মতো তরুণরা একজন সিদ্দিকুর রহমান হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। ক্রিকেটের দেশে গলফের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। 'বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন'ই হতে পারে বাংলাদেশের 'গলফের দেশ'-এ পরিণত হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।