বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। বিশ্বসেরা এই শ্রীলঙ্কান অফ স্পিনার ভেন্যুর উইকেট দেখে ২০০৬ সালে বলেছিলেন, তার দেখা অন্যতম সেরা উইকেট। ব্যাটসম্যান, বোলার- সবার জন্যই উন্মুক্ত সেরা পারফরম্যান্সের জন্য। অথচ গত ৯ বছর ধরে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হচ্ছে না বগুড়ায়। ব্রাত্য হয়ে আছে ভেন্যুটি। একই অবস্থায় ছিল নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯ বছর আগে একমাত্র টেস্টটি হয়েছিল ফতুল্লায়। এরপর অবশ্য ওয়ানডে হয়েছে। তবে অনিয়মিত। বগুড়ায় খেলা না হলেও ফতুল্লায় ফিরছে টেস্ট। ১০-১৪ জুন ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি হবে ফতুল্লায়। যা বাংলাদেশের ৯১ নম্বর টেস্ট।
২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি হয়েছিল ৯-১৩ এপ্রিল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পঞ্চম দিনে হেরেছিল বাংলাদেশ। অথচ টেস্টটিতে জেতার মতো অবস্থায় ছিল টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে শাহরিয়ার নাফিসের ১৩৮ রানে ভর করে ৪২৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। শাহরিয়ার সেঞ্চুরি করলেও স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ছিলেন দুরন্ত। ৮৮ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ২৬৯। তাও সম্ভব হতো না। যদি না সাত নম্বরে ব্যাট করে ১৪৪ রানের ইনিংস খেলতেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ১৫৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৮ রানে। অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট দাঁড়ায় ৩০৭ রানের। সেই রান টপকে যায় অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিতে। পন্টিং অপরাজিত থাকেন ১১৮ রানে। অধিনায়কের সেঞ্চুরিতে হারা ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া জিতে যায় ৩ উইকেটে।
৯ বছর পর ফের ফতুল্লায় টেস্ট হচ্ছে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম থাকার পরও কেন ফতুল্লা স্টেডিয়ামে টেস্ট আয়োজন করছে? উত্তরে বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনাতেই ছিল ফতুল্লা স্টেডিয়ামে টেস্ট আয়োজনের। সে জন্যই আমরা এখানে টেস্ট আয়োজন করছি।' তবে গুঞ্জন অন্য কিছুর। ফতুল্লাকে টেস্ট খেলার উপযুক্ত করার একটাই কারণ, পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের।
ফতুল্লা স্টেডিয়ামে একটি টেস্ট ছাড়াও ওয়ানডে হয়েছে ১০টি। যার পাঁচটিই হয়েছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে। ওয়ানডে ছাড়া চার দিনের ম্যাচ হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু টেস্ট হচ্ছে দ্বিতীয়বারের মতো। টেস্ট যাতে ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটি কাজ করছে খুব ভালোভাবে। গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়া বলেন, 'এখানে ওয়ানডে হচ্ছে। কিন্তু টেস্ট হয়নি গত ৯ বছরে। কিউরেটর গামিনি সিলভাকে নির্দেশ দিয়েছি টেস্ট খেলার মতো উইকেট বানাতে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, উইকেট প্রস্তুত। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে আউট ফিল্ডও।' আউট ফিল্ড, উইকেট নিয়ে জোরকদমে কাজ করছে গ্রাউন্ড কমিটি। কিন্তু অপরাপর সুযোগ, সুবিধাগুলো এখনো আগের অবস্থায়ই রয়ে গেছে। সাজঘরের বাথরুমের দরজা ভালো নয়। ফ্ল্যাশ ভালো নেই। আয়না ভাঙা। সাজঘরের ক্রিকেটারদের বসার চেয়ার ভাঙা। এ ছাড়া মিডিয়া বক্সে পর্যাপ্ত সুবিধাও কম। ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এসি চলে না ঠিকমতো। অথচ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি হতে বাকি নেই আর বেশি দিন।
টেস্টের জন্য এর মধ্যেই ২৩ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে ক্রিকেট বোর্ড। তাতে ফিরেছেন বিশ্বকাপ শেষে পাকিস্তান সিরিজে বাদ পড়া শফিউল ইসলাম সুহাশ ও এনামুল হক বিজয়। কাল থেকে অফিসিয়াল অনুশীলন শুরু টাইগারদের। কিন্তু গতকাল থেকেই ক্রিকেটাররা নেমে পড়েছেন অনুশীলনে। জিম করেছেন। আজও করবেন। কাল ও পরশু অফিসিয়ালি জিম করতে হবে ক্রিকেটারদের। এরপর ছুটি। বিসিএলের চূড়ান্ত পর্ব খেলবেন ক্রিকেটাররা। তারপরও ১ জুন থেকে আবার অনুশীলন।