ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়শন স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে আসতে পার হতে হয় সাত সমুদ্র তের নদী! হোটেল থেকে উঁচু নিচু পাহাড়-পর্বত পেড়িয়ে স্টেডিয়ামে আসার পর পোহাতে হয় পুলিশের বিড়ম্বনা! সাংবাদিক, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও আছে! তাতে কী? তবুও পার হতে হয় চার-পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। প্রতিবারই বডি চেক, ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুলে দেখা হয়। হোটেল থেকে প্রেসবক্সে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই নাজেহাল অবস্থা!
ধর্মশালায় নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির কারণ নাকি ১৯ মার্চ 'ভারত-পাকিস্তান' ম্যাচটি। অথচ ম্যাচটি হতে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয়। না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রাজা বীরভদ্র সিং সরাসরি বলে দিয়েছেন 'ভারত-পাকিস্তান' ম্যাচের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। পাকিস্তানও ধর্মশালায় খেলতে চাচ্ছে না।
কারণ কি?
ধর্মশালার পাশেই জম্মু-কাশ্মির! যুদ্ধে এখাকার অনেক মানুষ শহীদ হয়েছে পাকিকস্তানী সেনাদের গুলিতে। তাছাড়া সীমান্তে মাঝে মধ্যে মারা যাচ্ছে। সবার মধ্যে তাই পাকিস্তানকে নিয়ে ক্ষোভ! হয়তো ধর্মশালায় পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের দেখলে এখানকার সাধারণ মানুষের ক্ষোভটা আরও বেড়ে যাবে। সে কারণেই নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'আমরা পাকিস্তানকে নিরাপত্তা দিয়ে শহীদদের অবমাননা করতে পারি না। এখাকার অধিকাংশ পরিবারের কেউ না পাকিস্তানের সেনাদের হাতে শহীদ হয়েছেন। তাই পাকিস্তানকে ধর্মশালায় দেখলে তাদের ক্ষোভটা বেড়ে যেতে পারে।'
স্টেডিয়ামে আসার পথে কথা হচ্ছিল ষাটোর্ধ্ব ট্যাক্সিচালক সন্দিপনের সঙ্গে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ প্রসঙ্গ আসতেই কড়া গলায় বললেন, 'এই ম্যাচ আমরা চাই না। ধর্মশালার পবিত্র মাটিতে পাকিস্তানকে দেখতে চাই না। এটা কোনো ক্রমেই হতে পারে না।' আর বেশ কিছু কথা বলার পর গলা ধরে আসে আসে সন্দিপনের। এক হাতে চোখ মুছে নিয়ে বলে, 'ওরা আমার ভাইকে মেরেছে। এ কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। তাই পাকিস্তানি কাউকে দেখলে আমার রক্ত টগবগ করে।'
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হওয়ার সম্ভাবনাতেও দেখা গেল অনেকের কণ্ঠে হতাশা। গণেশ নামে স্থানীয় এক তরুণ বলেন, 'অনেক আশা করেছিলাম, এই ধর্মশালায় পাকিস্তানকে হারিয়ে আমরা রাত ভর উৎসব করবো। এখন ম্যাচটি হতে না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমি চাই ম্যাচটা এখানেই হোক, আর আমরা ওদের হারিয়ে লজ্জা দেই।'
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে ধর্মশালার আসে পাশের সব হোটেল-কটেজ আগেই বুক। কিন্তু এখন সেই ম্যাচটাই বোধহয় হচ্ছে না। আইসিসি পাকিস্তানের আপত্তি আমলে নিয়েছে। তবে এই ম্যাচটি যে ভেন্যুতেই হোক না কেন, সেখানেই যে বাড়তি উত্তেজনা ছড়াবে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না!
বিডি-প্রতিদিন/৯ মার্চ ২০১৬/শরীফ